কেলি-ফস্ফোরিকাম (Kali Phosphoricum)
অপর নাম।-ফসফেট-অভ-পটাসিয়াম।
ব্যবহারস্থল।-উন্মাদরোগ, মস্তিষ্কের শীর্ণতা, মূৰ্চ্ছাবায়ু, রক্তাল্পতা, মানসিক অবসাদ; মুখের পচনশীল ক্ষত, দুষ্টব্রণ, কলেরা, সাংঘাতিক উদরাময়, অনিদ্রা, স্নায়বিক অজীর্ণতা, কামোন্মাদ, পক্ষাঘাত, সূতিকা-জ্বর ও সূতিকোন্মাদ প্রভৃতি।
ক্রিয়াস্থল।-জীবনীশক্তির সংরক্ষণ ও বন্ধনার্থ এটার প্রয়োগ প্রসিদ্ধ। স্নায়বিক দৌর্বল্য এটার মর্মকথা। কোন রোগের কঠিন অবস্থায় জীবনীশক্তি যখন অবসন্ন হয়ে পড়ে ও কথা জড়িয়ে আসে তখন ঔষধটি বিশেষ উপযোগী।
প্রদর্শক লক্ষণ।-মাথাধরার সঙ্গে সর্বদাই ক্ষুধা পায়। কোন রোগের কঠিন অবস্থায় জীবনীশক্তি যখন অবসন্ন হয়ে পড়ে, কথা জড়িয়ে আসে তখন ঔষধটি বিশেষ উপযোগী। কানের ব্যথা শুইলে বৃদ্ধি। শব্দ সহ্য হয় না। মুখমন্ডলে নিউরালজিক ব্যথা, ডানদিকে, ঠান্ডা পানি লাগালে কম হয়। দাঁতে যন্ত্রণা, সেইসঙ্গে মুখ হতে লালাস্রাব। ক্ষুধা, কিন্তু সামান্য খাবার খেলেই আর ক্ষুধা থাকে না। কলিক, মলবেগ পায়, কিন্তু মলত্যাগ করে না। খাওয়ার পর কলিক। সামনে ঝুঁকলে বা দুমড়াইয়া পড়লে উপশম। খেতে খেতেই মলবেগ পায়। রতিক্রিয়ার পর অত্যন্ত দুর্বলতা ও দৃষ্টিশক্তির হ্রাস। গয়ার সবুজ, সাবানের ফেনার মত, নোনতা, মিষ্টি, দুর্গন্ধ। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে বুক ধড়ফড় করে। রক্তবমি ও সেইসঙ্গে বুক ধড়ফড় করে। বাতরোগ, গরমে উপশম। নড়াচড়ায় উপশম। আঙ্গুলের ডগ অসাড়। বগলের ঘামে পেঁয়াজের গন্ধ। অসীম দুর্বলতা ও ক্লান্তি। পচনশীল ক্ষত, তাতে দুর্গন্ধ। মুখ হতে দুর্গন্ধ, মলে দুর্গন্ধ, স্রাবে দুর্গন্ধ। সকালে মুখ অত্যন্ত শুষ্ক। আমাশয়, কেবল খাঁটি রক্ত, প্রলাপ, পেট ফোলা, দুর্গন্ধ। উদরাময়, পচা দুর্গন্ধযুক্ত মল। হাঁপানি, খেলেই বৃদ্ধি। কলেরা, ফেনের মত দাস্ত, সেটা দুর্গন্ধ। দুর্বলতা। মূত্রনলী হতে রক্তস্রাব। মূত্র সোনার মত হলদে। ফ্যাকাসে, খিটখিটে লোক। সেপটিক অবস্থা। সেপটিক-জ্বর। পক্ষাঘাত রোগ ধীরে ধীরে প্ৰকাশ পায়। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কথা বলে।
মন।-দুর্বল স্নায়ুবিশিষ্ট; সামান্য কারণেই উত্তেজিত ও বিরক্ত হয়। মেজাজ বড়ই খিটখিটে, ভাল কথায় বিরক্ত হয়। সকল বিষয়েই নিরাশ, সন্দিগ্ধচিত্ত ও নিরুৎসাহ। সুস্লার এই ঔষধটিকে চিত্তোন্মাদ, স্মৃতিকোন্মাদ, পাগলামি প্রভৃতি ক্ষেত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ আসন দিয়েছেন। তুলনীয়। – অরাম- মেট-জীবনে বিপিপাসা, নৈরাশ্য। সর্বদা আত্মহত্যা করার প্রবৃত্তি, রোগ আরোগ্য হবে না এমন কথাই সর্বদা বলে। পারদের অপব্যবহারের পরে এবং উপদংশ রোগগ্রস্তদের পক্ষে উপযোগী। সাইক্লামেন-মনের কষ্টের জন্য রোগিণী নীরবে বসে কাঁদে, তার অবস্থা কাকেও বুঝতে দেয় না। অজীর্ণ, পেটে বায়ু, মাথাঘোরা। ককুলাস-রোগী প্রতিবাদ মোটেই সহ্য করতে পারে না, সামান্য কারণে দোষী বিবেচনা করে এবং রেগে যায়। ভাবাবস্থিত চিত্ত। কলচিকাম-মন্দ ব্যবহার, গোলমাল, তীব্র গন্ধ, অন্যের সংস্রব, রোগী কিছুই সহ্য করতে পারে না। ইগ্নেসিয়া- পরিবর্তনশীল দীর্ঘ- মেজাজ, রোগিণী কখনও হাসে, কখনও কাঁদে। বিমর্ষ। গভীর শোক দুঃখ নীরবে সহ্য করে, নিঃশ্বাস ফেলে। কেলি-ব্রোম-মস্তিষ্কের ক্লান্তি। (brain fag); আত্মহত্যার ইচ্ছা, কাল্পনিক দৃশ্য দেখা, রাত্রিকালীন ভীতি, বিষাদপূর্ণ অলীক দর্শন। কেলি-কার্ব-রোগী হতাশ, রাগী এবং উত্তেজনশীল, প্রকৃতি পরিবর্তনশীল, একগুঁয়ে; শব্দে, স্পর্শে এবং বেদনায় অত্যন্ত কাতর, একাকী থাকতে পারে না, ভয় হয় নাক্স-ভমিকা -অত্যন্ত খিটখিটে, ঝগড়াটে, পরছিদ্রান্বেষী স্বভাব, হিংসাদ্বেষপূর্ণ, রাগী, সামান্য কষ্টে অভিভূত হয়ে পড়ে। আত্মহত্যার প্রবৃত্তি অথচ মরিতে ভয়। ষ্ট্যাফিসেগ্রিয়া -বিষাদ। প্রবল মানসিক আবেগ এবং উচ্ছ্বাস, সামান্য ব্যাপারেই দোষ হয়, রোগী সর্বদা কাম চিন্তা করে, নির্জনে থাকতে ভালবাসে।
শিরঃরোগ।-স্নায়ুর অবসাদ ও দুর্বলতার জন্য শিরঃরোগে, স্নায়ুপ্রধান ব্যক্তিদের ও অতিরিক্ত মানসিক পরিশ্রমকারীদের মাথার যন্ত্রণায় এবং ছাত্র-ছাত্রী, উকিল, ডাক্তার, ব্যবসায়ী প্রভৃতি বৈষয়িক ব্যক্তিদের রোগে এটা একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ। শিরঃরোগের জন্য শিরঃরোগ।
তুলনীয়।-অ্যাসিড-ফস-স্নায়বিক দুর্বলতার জন্য মাথাধরা, মাথাঘোরা এবং বুক ধড়ফড় করা। মানসিক অবসাদ। ছাত্রদের অতিরিক্ত অধ্যয়ন জনিত মাথাধরা। অ্যাসিড-পিক্রিক- অতিরিক্ত ইন্দ্রিয় চালনাহেতু স্নায়ুদৌর্বল্য হতে মাথাঘোরা এবং মাথাধরা, রোগী সর্বদা মনমরা হয়ে থাকে। কেলি-ব্রোম-মস্তিষ্কের রক্তশূন্যতা, দুর্বলতা। রোগীর সর্বদা বিষণ্ণ ও মনমরা, স্মৃতিশক্তি থাকে না, অপরিমিত ইন্দ্ৰিয় চালনা হেতু রোগ। নিকোলাম-স্নায়বিক শিরঃরোগ, নির্দিষ্ট সময় অন্তর উপস্থিত হয়। অর্দ্ধ-শিরঃশূল, সকাল হতে দ্বিপ্রহর পর্য্যন্ত বৃদ্ধি। অ্যাসিড-নাইট্রেট-মাথাধরা সকালে শুরু, দ্বিপ্রহরে বৃদ্ধি ও সন্ধ্যাকালে উপশম। নেট্রাম-কার্ব-মানসিক পরিশ্রমে মাথাঘোরা ও মাথাধরা বাড়ে, রোগী কোন বিষয় চিন্তা করতে পারে না। সূর্য্যের উত্তাপে বৃদ্ধি (ল্যাকেসিল, গ্লোনইন ও লাইসিন-সূর্য্যের উত্তাপে বৃদ্ধি)। নেট্রাম মিউর-অর্দ্ধ-শিরঃশূল অথবা মাথায় ব্যথা, সকালে নিদ্রাভঙ্গের পরে আরম্ভ, পিপাসা, সম্মুখ রগে ভীষণ বেদনা, মনে হয় কেউ হাতুড়ী মারিতেছে (বেলেডোনায় দপদপকর মাথাধরা থাকলেও তা মস্তকে রক্তাধিক্য হেতু; নেট্রাম রক্তহীন ও ফেকাসে), দৃষ্টি ঝাপ্পা। স্কুলের বালক-বালিকাদের মাথাধরা (ক্যাল্কে-ফস)। নাক্স ভমিকা- মাথাঘোরার সঙ্গে মাথাধরা। সকালে মানসিক পরিশ্রমে, মদ্যপানে ও তামাকু সেবনে এবং খোলা বাতাসে বৃদ্ধি। সিপিয়া-মস্তকের নিম্নভাগ হতে আরম্ভ হয়, ক্রমে উপরে উঠে, এই সঙ্গে বমি ও গা-বমি থাকে। অর্দ্ধ-শিরশূলেও এটা উপযোগী, জরায়ু রোগগ্রস্তা স্ত্রীলোকদের পক্ষে অধিকতর উপযোগী।
মেনিঞ্জাইটিস।-স্নায়বিক দৌর্বল্যবশতঃ মেনিঞ্জাইটিস রোগে অন্য ঔষধের লক্ষণ থাকলেও এই ঔষধ মাঝে মাঝে ব্যবহার করা যায়। রোগী নিদ্রিতাবস্থায় হঠাৎ চীৎকার করে উঠে।
সন্ন্যাসরোগ।-সন্ন্যাসরোগের পূর্বে ও পরে পক্ষাঘাতের কোন লক্ষণ পেলে এই ঔষধ বিশেষ উপযোগী। কোনরূপ স্নায়বিক বা মানসিক কষ্ট অথবা শোকের জন্য সন্ন্যাসরোগ হলে ব্যবহার্য্য।
তুলনীয়।– অ্যানাকার্ডিয়াম-সন্ন্যাসরোগের পরে পক্ষাঘাত্র। স্মৃতিশক্তি একেবারে কমে যায়, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের দুর্বলতা এবং করুণ। আর্ণিকা-আঘাতের পরের সন্ন্যাস এবং পক্ষাঘাত, মস্তক গরম ও সমস্ত শরীর ঠান্ডা, রোগী অজ্ঞান, অসাড়ে বাহ্যে-প্রস্রাব করে। ব্যারাইটা কার্ব-বৃদ্ধ বয়সের ব্যাধি, সন্ন্যাস এবং পরবর্ত্তী পক্ষাঘাত। জিহবায় পক্ষাঘাত, কথা বলার শক্তি থাকে না, হস্তপদের কম্পন, স্মৃতিশক্তি লোপ। নাক্স ভমিকা – যারা শারীরিক পরিশ্রম না করে অত্যধিক মানসিক পরিশ্রম করে তাদের এবং মদ্যপায়ীদের সন্ন্যাস এবং পরবর্তী পদাঘাতে ব্যবহৃত হয়। নিম্ন প্রত্যঙ্গের অসাড়তাসহ পক্ষাঘাত। ওপিয়াম -রোগী সম্পূর্ণ অজ্ঞান, গভীর তন্দ্রায় আচ্ছন্ন, রোগী নাক ডাকিয়া নিদ্ৰা যায়, গলায় ঘড়ঘড় শব্দ হয়। আক্রান্ত অঙ্গের অসাড়তা। সিকেলি-কর – আক্ষেপের পরে এবং সন্ন্যাসের পরে পক্ষাঘাতে উপযোগী, আক্রান্ত অঙ্গের দ্রুত শীর্ণতা, অসাড়ে বাহ্যে প্রস্রাব।
স্নায়ুশূল।-স্নায়বিক অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তিদের স্নায়ুশূল রোগে এটা উপযোগী। আমোদ- প্রমোদের ভিতর থাকলে স্নায়ুশূলের উপশম, কিন্তু একাকী থাকলে বৃদ্ধি এটার নির্দিষ্ট লক্ষণ।
উন্মাদরোগ।– অতিরিক্ত পড়াশুনার ফলে উন্মাদরোগে, সামান্য কারণে বিরক্ত ও অতিরিক্ত খিটখিটে স্বভাবের রোগীদের জন্য উপযোগী। উন্মাদরোগী কখনও হাসে, কখনও কাঁদে, কখনও বেশ স্ফুর্ত্তিতে থাকে, আবার কখনও বা অত্যন্ত বিষণ্ন হয়ে পড়ে।
ডিফথিরিয়া। -এই রোগের যে কোন অবস্থার যদি অবসন্নতা, দুর্বলতা, নাড়ী লোপ, সর্বাঙ্গের শীতলতা প্রভৃতি সাংঘাতিক লক্ষণ উপস্থিত হয়, তা হলে এই ঔষধ প্রয়োগ করতে হয়।
ডিস্পেপ্সিয়া।-অতিরিক্ত মানসিক পরিশ্রম অথবা স্থায়বিক দৌর্বল্যের জন্য অজীর্ণ রোগে যদি অস্বাভাবিক ক্ষুধা বা আহারে অনিচ্ছা থাকে, পেটফাঁপা, ঢেঁকুর হতে দুর্গন্ধ, দুর্গন্ধ তরল মল; মিষ্টিদ্রব্য টক ও বাসীদ্রব্য এবং বরফের মত ঠান্ডা পানীয়ে আকাঙ্ক্ষা থাকে, তবে এটা একটি বিশিষ্ট ঔষধ।
কলেরা।-ডাঃ সুস্লারের মতে এটা কলেরার শ্রেষ্ঠ ঔষধ। অতিশয় দুর্গন্ধযুক্ত চাউল ধোয়ানী পানির মত তরল মল নিঃসৃত হয়। কলেরার পতনাবস্থা যখন রোগীর চোখ-মুখ ও নাড়ী বসে যায় বা নাড়ী ক্ষীণ হয়, স্বর বসে যায়, অত্যধিক ঘাম হয়, মুখে অত্যন্ত দুর্গন্ধ ও দাঁতে অধিক ময়লা পড়ে, তখন এই ঔষধ কার্যকরী। হোমিওপ্যাথিক ঔষধ – কার্বো-ভেজের সাথে এটার হুবহু মিল আছে। কার্বো-ভেজ হিমাঙ্গাবস্থার একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ-এটাকে মৃতসঞ্জীবনী বলা হয়। সমস্ত শরীর বরফের মত ঠান্ডা, আঙ্গুল, নাক, গাল, জিভ, এমন-কি নিঃশ্বাস পৰ্য্যন্ত শীতল, রোগী কেবলই পাখার হাওয়া চায়, অক্সিজেনের অভাব, হাওয়া না পেলে দমবন্ধ হয়ে আসে। হিমাঙ্গাবস্থায় ক্যাঙ্কারও ব্যবহৃত হয়, কিন্তু ক্যাফারের হিমাঙ্গাবস্থা দুই-একবার ভেদবমির পরেই হঠাৎ উপস্থিত হয় আর কার্বো-ভেজ ও কেলি-ফসের হিমাঙ্গাবস্থায়-অনবরত ভেদ-বমি হতে হতে উপস্থিত হয়, স্বরভঙ্গ এই কয়েকটি ঔষধেই আছে। বায়োকেমিক নেট্রাম-ফস – ৩x বা ৬x যদি কলেরার প্রথম হতেই অন্যান্য ঔষধের সঙ্গে ব্যবহার করা যায়, তা হলে প্রস্রাব একেবারে বন্ধ হয় না এবং কলেরার সাংঘাতিক উপসর্গ মূত্রবিকার আসতে পারে না। অম্লরোগী এবং কৃমিধাতুগ্রস্তদের পক্ষে নেট্রাম-ফস অধিকতর উপযোগী হয়ে থাকে।
পুংজননেন্দ্রিয়ের রোগ। -অতিরিক্ত হস্তমৈথুন জন্যই হোক বা অন্য যে কোন কারণেই হোক অতিরিক্ত বীর্যক্ষয় জনিত স্নায়বিক দৌর্বল্যে এটা একটি উত্তম ঔষধ। সকালবেলা ইন্দ্রিয় অতিশয় উত্তেজিত হয়, কিন্তু সহবাস করার পরই রোগী অবসন্ন ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তুলনীয়।-অ্যাসিড – ফস, অ্যাসিড-পিক্রিক, অ্যানাকার্ডিয়াম, কেলি-ব্রোম।
স্ত্রীরোগ।-কেলি-ফস স্বল্পরজঃ বাধক, রক্ত-প্রদর ও শ্বেত-প্রদর প্রভৃতি রোগে উপযোগী। অতিরিক্ত রক্তস্রাবের ফলে রোগিণী দুর্বল হয়ে পড়ে। শ্বেত-প্র যেখানে লাগে সেই স্থান হেজে যায়। দেশীয় ঔষধ -অশোক এই সকল ক্ষেত্রেই বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
এটার মূল-অরিষ্ট বা ১× শক্তি, বেশী দিন ধরে ব্যবহার করলে শ্বেত-প্রদর, রক্ত-প্রদর ইত্যাদিতে বিশেষ ফল পাওয়া যায়।
প্রসববেদনা।-এটা সুপ্রসবের খুব. ভাল ঔষধ বলে খ্যাত। প্রসববেদনা ভালরূপ আসে না, বেদনা কখন কম কখনও বেশী হয়। অপ্রকৃত প্রসববেদনায় এটা সেবন করলে শীঘ্রই জরায়ুর বল বৃদ্ধি হয়ে সুপ্রসব হয়ে থাকে। ডাক্তার রোজাস বলেন -৩ বৎসর ধরে প্রসববেদনায় আমি কেলি – ফস ৪x, ১০ গ্রেণ মাত্রায় (১০-১৫ মিনিট অন্তর জিহবার উপর শুষ্কাবস্থায় দিতে হয়) দিয়ে কখনও ব্যর্থ হই নেই। প্রায় দুই মাত্রাতেই কাজ হয়েছে, তৃতীয় মাত্রা কদাচিৎ দিবার প্রয়োজন হয়েছে। ডাঃ হোলব্রুক, ভোজেল, চ্যাপমান প্রভৃতি প্রসিদ্ধ বায়োকেমিক চিকিৎসকগণও এই প্রকারের মত প্ৰকাশ করে গেছেন। সুপ্রসব করণার্থ কেলি-ফসের মত কয়েকটি হোমিওপ্যাথিক ঔষধের সুনাম আছে এবং বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে; যথা, ক্যামোমিলা-খিটখিটে মেজাজের বদরাগী পোয়াতিদের পক্ষে উপযোগী, পোয়াতী বেদনা মোটেই সহ্য করতে পারে না, কাঁদাকাটা করে অস্থির হয়, ভাল মুখে কিছু জিজ্ঞাসা করলে তার খারাপ উত্তর দেয়। কলোফাইলাম – জরায়ুর মুখের কাঠিন্য; বেদনা ক্ষীণ, ঘিনঘিনে, আক্ষেপিক ধরণের – যাহাকে বলে উড়ো বেদনা, একবার এখানে, একবার ওখানে, ছেড়ে ছেড়ে হয়। সিমিসিগা-জরায়ু মুখের কাঠিন্য, তীব্র বেদনা। বেদনার সময়ে কম্প, এমন-কি ভয়ে কম্প হলেও এটা বিশেষ ফলপ্রদ হয়ে থাকে। মূৰ্চ্ছার ভাব হলেও এটা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। জেলসিমিয়াম- জরায়ুর মুখ শক্ত, সহজে খোলে না, বেদনা নীচের দিকে না গিয়ে উপরে ঠেলা মারে, পানমুচি জরায়ুমুখে আটকিয়ে থাকে। পালসেটিলা-সুপ্রসবের অন্যতম উৎকৃষ্ট ঔষধ। অনিয়মিত বেদনা, কখনও কম, কখনও বেশী হয়, কখনও মোটেই থাকে না। বেদনায় জোর থাকে না বলে জরায়ুমুখও সহজে খোলে না। সিকেলি- কর-ধীরে ধীরে বেদনা আসে, বেদনা কখনও জোর হয় না, অনেকক্ষণ ধরে বেদনা চললেও জরায়ুমুখ খোলে না। এটা ব্যতিরেকে গর্ভপাতেও এটা সেবন করা যায়। যাদের প্রায়ই গর্ভপাত হয় তাদিগকেও গর্ভসঞ্চারের পর হতেই এই ঔষধ সেবন করান ভাল। সূতিকাজ্বরে কেলি-ফস, কেলি-মিউর ও ফেরাম-ফস পর্যায়ক্রমে বিশেষ উপযোগী হয়ে থাকে।
বৃদ্ধি।-খাওয়ার পর; সকালে উঠবার পর; যে পাশে যন্ত্রণা সেই পাশে শুইলে; ভোর ৩টা হতে ৫টা পৰ্য্যন্ত; ঠান্ডা হাওয়া লাগলে; রতিক্রিয়ায়।
হ্রাস।-ঋতু সুরু হলে; কিছুতে ঠেস দিলে; বসলে; দুমড়াইয়া পড়লে; ঢেঁকুর উঠলে; গরম বা উত্তাপে।
শক্তি।-৩x, ৬x, ১২x চূর্ণ; ৩০, ২০০, ১০০০