ইপিকাকুয়ান্হা (।pecacuanha)

পরিচয়। – সাধারণতঃ ইপিকাক নামেই পরিচিত। ব্রেজিল দেশীয় উদ্ভিদবিশেষ।

ব্যবহারস্থল।-রক্তশূন্যতা, সর্দি, হুপিং-কাশি, আক্ষেপ, হাঁপানি, অতিসার, আমাশয়, আন্ত্রিক- জ্বর, চোখের অসুখ, পাথুরী, রক্তবমন, রক্তস্রাব, অর্শ; মূাভাব; সবিরাম জ্বর ও গর্ভাবস্থার উপসর্গ প্রভৃতি। প্রদর্শক লক্ষণ।– অনবরত গা-বমি-বমি, বমি হলেও গা-বমি-বমি কমে না, জিহবা পরিষ্কার (অ্যান্টিম-ক্রুড-বমি-বমি ভাব সহ জিহবায় সাদা লেপ, পালস -চর্বিযুক্ত খাদ্যগ্রহণের জন্য বমি-বমি ভাব, ময়লা জিহবা সহ)। রক্তস্রাব প্রচুর উজ্জ্বল ও লালবর্ণ। রোগী অত্যন্ত রাগী। মল ঝোলাগুড়ের মত, ফেনা ফেনা, ঘাসের মত সবুজ। নাভির চারিপার্শ্বে যন্ত্রণা। হুপিং-কাশি, নাক হতে রক্ত পড়ে, মুখ হতে রক্ত পড়ে। ফুসফুস হতে রক্ত উঠে, গা-বমি-বমি। বুকে সর্দি ঘড়ঘড় করে। সর্দির শেষে স্বরভঙ্গ। মাথা গরম, মাথা দপদপ করে, সেইসঙ্গে গাল লাল। চোখে যন্ত্রণা ও সেইসঙ্গে চোখ হতে পানি পড়ে। জ্বরের সময় কান ঠান্ডা। শব্দ সহ্য হয় না। রোগী সাধারণতঃ পিপাসাহীন। বমির পর নিদ্রালুতা, ঘুম পায়, সামান্য ঝুঁকলে বমি। খোস-পাঁচড়া মলম প্রয়োগে সারিবার পর রক্ত প্রস্রাব। শিশুদের নিউমোনিয়া, ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস, কষ্টকর শ্বাস-প্রশ্বাস, শরীর নীল, মুখ ফ্যাকাসে। একটি হাত ঠান্ডা, অপরটি গরম। মৃগী, শরীর পশ্চাদ্দিকে বেঁকে যায়; ফ্যাকাসে। গা চুলকাইতে থাকে, বমি না হওয়া পৰ্য্যন্ত শান্তি নেই। ইরিসিপেলাস ও সেইসঙ্গে বমি।

মন। -ইপিকাক রোগী অত্যন্ত রাগী। শিশু অবিরত কাঁদে ও চীৎকার করে এবং বয়ঙ্ক রোগী সর্বদাই রাগান্বিত ও বিমর্ষ। সে সামান্য শব্দেই বিরক্ত হয়।

হাঁপানি।– গরম আর্দ্র বায়ু হতে হাঁপানি। বুক টান হয়ে (constriction) থাকে; সামান্য নড়া-চড়ায় বৃদ্ধি; বুকে সর্দি ঘড়ঘড় বা সাঁই সাঁই করে, তবুও গয়ার উঠে না। নিঃশ্বাস ফেলতে বেশী কষ্ট, খোলা জানালার নিকট যায়; মুখ ফ্যাকাসে, দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম; রাত্রে বৃদ্ধি; হাত-পা ঠান্ডা; ঠান্ডা ঘাম; বমি হলে হ্রাস। বহুকালের হাঁপানি রোগীদের টান যখন খুব বেড়ে যায় এবং ঐ অবস্থা যদি ৪/৫ দিন স্থায়ী হয় তবে কয়েক মাত্রা ইপিকাক প্রয়োগ করলে রোগী অনেকটা সুস্থ হয়। সত্বর হাঁপানির টান কমাইতে ইপিকাকের মত অ্যাকোনাইট, আর্সেনিক, ব্লাটা-ওরিয়েন্ট্যালিস, জার্বা-সান্টা প্রভৃতি কয়েকটি ঔষধও বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্যাসিফ্লোরাও এটার ফলপ্রদ ঔষধ। তুলনীয়। – অ্যারেলিয়া রেসিমোসা হাঁপানির জন্য রোগী শুইতে পারে না, শুইলেই দমবন্ধ হয়ে আসে, তাকে উঠে বসে থাকতে হয়। লোবেলিয়া – আক্ষেপিক ধরণের হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, দমবন্ধের মত অবস্থা। আর্সেনিক-রোগী শুইতে পারে না, উঠে বসে থাকতে হয়। গুইলেই দমবন্ধ হয়ে আসে। মধ্যরাত্রির পরে টান বাড়ে। কেলি- বাই-বর্ষাকালে এবং শীতে ঠান্ডা পড়লেই হাঁপানির টান বাড়ে। ভোর ৩/৪টায় বৃদ্ধি। আঠার মত গয়ার, দড়ির মত লম্বা হয়ে ঝুলতে থাকে।

নিউমোনিয়া। -শিশুদের নিউমোনিয়া; দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস; কষ্টকর শ্বাস-প্রশ্বাস; অত্যও হাঁপানি বা টান; বুকে ঘড়ঘড় শব্দ; গা-বমি-বমি; মুখমন্ডল ফ্যাকাসে বা নীল; তড়কা। তুলনীয়।– অ্যান্টিম-টার্ট বুকে ঘড়ঘড় শব্দ অথচ কাশলে কিছু উঠে না। ঠান্ডা ঘামের সঙ্গে দুর্বলতা এবং তন্দ্রাভাব এটার বিশেষ লক্ষণ। অ্যান্টিম-আর্স—অ্যান্টিম-টার্টের লক্ষণের সঙ্গে আর্সেনিকের অস্থিরতা এবং পিপাসা থাকলে ব্যবহৃত হয়। সেনেগা-(অ্যান্টিম-টার্টের মত) বুকে ঘড়ঘড় শব্দ; শ্লেষ্মা জমা আছে অথচ কাশলে উঠে না। শ্বাসকষ্ট এবং বুকে বেদনা। ফঙ্কোরাস -সমস্ত বুকে রালস্ শব্দ। শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট এবং বুকে বেদনা। খুকখুকে কাশি, লোহার মত লালচে গয়ার। রোগী বাম পার্শ্বে চেপে শুইতে পারে না। ব্রাইয়োনিয়া কাশি অপেক্ষাকৃত সরল এবং কষ্টও কম, কিন্তু বুকে সঁচফোটানো ব্যথা। রোগী কাশবার সময়ে হাত দিয়ে বুক চেপে ধরে। বেদনার দিকে চেপে শুইলে উপশম বোধ করে।

কাশি।-গলা সুড়সুড় করে কাশি; শুষ্ক কাশি; দারুণ কাশি; দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম, কপালে ঘাম; কাশবার সময় মাথায় লাগে; ওয়।ক উঠে, বমি হয়, কাশি এত দ্রুত হয় যে, নিঃশ্বাস ফেলিবার সময় পায় না এবং মুখ নীল হয়ে যায়; বুকে সর্দি, কিন্তু কাশলে উঠে না; হুপিং-কাশির সঙ্গে রক্তস্রাব; মোটা শিশু; কাশির সঙ্গে হাঁপিয়ে পড়ে। উপরে নিউমোনিয়ায় যে সকল ঔষধের সাথে ইপিকাকের তুলনা করা হয়েছে, এস্থলেও তাই প্রযোজ্য। এটা ব্যতীতও জ্যাষ্টিসিয়া- আঢাটোডা-বুকের ভিতর ঘড়ঘড় করে শ্লেষ্মা জমা, রোগী কাঁসে অথচ কিছু উঠে না অথবা সামান্য উঠে (অ্যান্টিম-টার্টের মত)। শীতকালের কাশিতে উপযোগী। বেলেডোনা – শুষ্ক, আক্ষেপিক কাশি, কাশতে কাশতে বুকে দমবন্ধ হওয়ার মত হয়, গলার মধ্যে বেদনা ও গরম বোধ হয়। রাতে শয়নের পরে কাশি বাড়ে। ব্রাইয়োনিয়া-শুষ্ক কাশি, গলার মধ্যে কুটকুট করে। গয়ার সহজে উঠে না, অতি কষ্টে সামান্য উঠে। মাথাব্যথা, রোগী কাশবার সময় হাত দিয়ে বুক চেপে ধরে। ফস্ফোরাস-শুষ্ক কাশি, গলা সুড়সুড় করে উপস্থিত হয়, সন্ধ্যাকালে বাড়ে। কাশতে কাশতে বুকে সমস্ত শরীর কাঁপিয়া উঠে; বুক, পিঠ, ঘাড় সমস্তই সেঁটে ধরে।

ব্রঙ্কাইটিস।-ঠান্ডা লেগে শিশুদের ক্যাপিলারি-ব্রঙ্কাইটিস হলে ইপিকাক একটি কার্যকরী ঔষধ। কাশবার সময় বায়ুনলী মধ্যে সাঁই সাঁই শব্দ হয়, বক্ষঃপরীক্ষার যন্ত্র দ্বারা পরীক্ষা করলে সমস্ত বুকেই শ্লেষ্মার বুদবুদ শব্দ শোনা যায়। শিশু কাশতে কাশতে বুকে শক্ত হয়ে যায়, মুখ নীলবর্ণ ধারণ করে, সেই বমির সঙ্গে শ্লেষ্মা বের হয়। এই অবস্থায় অ্যান্টিম-টার্টও উপযোগী। উভয় ঔষধেই বমন ও গা-বমি-বমি আছে, পার্থক্য এই-ইপিকাক রোগীর বমন অপেক্ষা গা-বমি-বমিই বেশী ইপিকাকের জিহবা পরিষ্কার, কিন্তু অ্যান্টিম-টার্টের জিহবায় পাতলা সাদা লেপ। ইপিকাক সাধারণতঃ রোগের প্রথম অবস্থায় ব্যবহৃত হয়। অ্যান্টিম-টার্টে রোগীর নাকের পাখা উঠানামা করে, ইপিকাকে করে না। ইপিকাকের রোগী একটু অস্থির প্রকৃতির, অ্যান্টিমের রোগী নির্জীব এবং নিদ্রালু।

হুপিং-কাশি। -হুপিং-কাশি রোগে শিশু কাশতে কাশতে বুকে শক্ত ও আড়ষ্ট হয়ে যায় (কোরাল – রুব) কখন কখনও কাশির প্রকোপে শিশুর মুখ নীলবর্ণ হয়, বুকে শ্লেষ্মা জমে ও বমনের জন্য শ্বাসরোধ হওয়ার উপক্রম হয় এবং কখন কখনও নাক ও মুখ হতে রক্ত বের হয় (ইন্ডিগো, আর্ণিকা)। রাত্রে এটার কাশি বাড়ে, কাশবার সময় মাথায় ও পাকযন্ত্রের ভিতর আঘাত লাগে। হুপিং- কাশি রোগে কুপ্রাম ও সিনা এটার সমতুল্য ঔষধ।

রক্তোৎকাস।-কাশির সঙ্গে রক্ত পড়লেও ইপিকাকের প্রয়োজন হয়। এটার সাথে গা-বমি- বমি, সেইসঙ্গে উজ্জ্বল প্রচুর রক্তমিশ্রিত গয়ার বের হয়, রক্তোৎকাসের সময় জোরে জোরে কষ্টকর · নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। সামান্য নড়াচড়ায় রক্তপড়ার বৃদ্ধি। তুলনীয়।– ফেরাম-মেট-কাশির বুকে টাটান ব্যথা, শুষ্ক কষ্টদায়ক কাশি, গরম পানি বা কোন পানীয় পান করলে কাশির বৃদ্ধি, নিঃশ্বাস ত্যাগ · হয়। সামান্য নড়াচড়ায় রক্তপড়ার বৃদ্ধি। তুলনীয়।– মেট -কাঁসির সাথে রোগীর বুকে বেদনা ও টাটানি থাকে। এটার রক্ত একটু কালচে, মাথা ব্যথা থাকে এবং রোগী অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। মিলিফোলিয়াম – বেদনাহীন উজ্জ্বল লালবর্ণের ও প্রচুর রক্তস্রাব এই ঔষধের প্রকৃতিগত লক্ষণ। ফস্ফোরাস-রোগীর শুষ্ক কষ্টদায়ক কাশি সন্ধ্যায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, গয়ার অল্প রক্তমিশ্রিত থাকে। আবার প্রচুর রক্ত উঠা ক্ষেত্রেও এটা সেইরূপ উপযোগী। পর্য্যায়ক্রমে অল্প ও প্রচুর রক্ত উঠে। ফস্ফোরাসকে যক্ষ্মাকাশির রক্তস্রাব নিবারণের সর্বশ্রেষ্ঠ ঔষধ বলা যেতে পারে, কিন্তু এটা সাবধানতার সাথে ব্যবহার্য্য। ফিকাস-রিলিজিওসা – কাশির সাথে রক্ত উঠা; রক্তবমন, সেই রক্ত উজ্জ্বল লাল। অ্যাকালিফা-ইন্ডিকা – যক্ষ্মারোগীর রাত্রিকালে শুষ্ক কাশি সহ সকালে উজ্জ্বল লাল রক্ত ও সন্ধ্যাবেলা চাপ চাপ কাল রক্ত উঠলে।

সর্দিজ্বর। -রোগীর নাকে সর্দি যেন ভরাই থাকে, খুব জোরে ঝারিলে সর্দি বের হয়। সর্দি- জ্বরের সাথে গা-বমি-বমি থাকে। কোন কোন রোগীর নাক হতে রক্তও পড়ে, সেইসঙ্গে ব্রঙ্কাইটিসের ভাব থাকে।

অজীর্ণ।-আহারের গোলযোগে পরিপাক যন্ত্রের বিকৃতি ঘটিলে, সেইসঙ্গে বমন ও গা-বমি- বমি থাকলে ইপিকাক ব্যবহার্য্য। এই অবস্থায় পালসেটিলা ও অ্যান্টিম-ক্রুড, ইপিকাকের সাথে তুলনীয়। ইপিকাক ও পালসেটিলা এই উভয় ঔষধই আইস-ক্রিম, চর্বি, ঘৃতপক্ক ও তৈলাক্ত খাদ্য, মাংস ও বড় তেলাল মাছ আহারাদির পর পরিপাক যন্ত্রের বিকৃতিতে উপযোগী। পালসেটিলায় বমনে উপশম এবং ইপিকাকে বমি-বমি ভাব লেগেই থাকে। ইপিকাকের জিহবা বেশ পরিষ্কার, পালসেটিলার জিহবা সাদা লেপাবৃত। অ্যান্টিম-ক্রুডে সাদা লেপাবৃত জিহবা। রোগী মনে ভাবে তার পাকযন্ত্র ও অন্ত্রগুলি, যেন শিথিল হয়ে গেছে এবং কেউ যেন তার পেটের ভিতর মোচড় দিচ্ছে।

উদরাময়।-এটার মল ঘাস বা পাতার মত সবুজ, মাগুড়ের মত ফেনাযুক্ত অথবা সাদা আম, শ্লেষ্মা বা রক্তযুক্ত। মলত্যাগের সময় ভয়ানক বেদনা ও কোঁথ থাকে। গ্রীষ্মকালীন শিশু-উদরাময়ের প্রথমাবস্থায় ইপিকাক বিশেষ কার্যকরী। শরৎকালীন আমাশয়েও এটা উপযোগী। কলেরা রোগের প্রারম্ভে যখন বমি, গা-বমি-বমি বিদ্যমান থাকে, বমি হয়ে গেলেও গা-বমি-বমির বিরাম হয় না, জিহবা পরিষ্কার থাকে তখন এই ঔষধ ব্যবহার্য্য। খাওয়ার অনিয়মের জন্য অজীর্ণ বা উদরাময় হলে অথবা দাঁত উঠবার সময় বা হাম-বসন্তের পীড়কাগুলি না উঠতে পারিয়া তড়কা হলে, সেইসঙ্গে মুখ হতে প্রচুর লালা নিঃসরণ ও গা-বমি-বমি বিদ্যমান থাকলে ইপিকাক মন্ত্রশক্তির মত কাজ করে। তুলনীয়।-নাক্স ভমিকা-খাওয়ার অনিয়ম, গরম মশলাযুক্ত খাদ্য গ্রহণ, রাত্রিজাগরণ, মাতলামী ইত্যাদি কারণ হতে জাত অজীর্ণ বা উদরাময়ে উপযোগী। বার বার মলত্যাগের বেগ হয়, অথচ বাহ্যে খোলসা হয় না। মার্ক-সল-আমসংযুক্ত মল, সবুজ বা সাদা। মলত্যাগের সময়ে পেটে বেদনা ও কোঁথপাড়া আছে। অ্যাটিষ্টা-ইন্ডিকা – শরৎকালীন আমাশয় বা উদরাময়ে অধিকতর উপযোগী। ক্রিমিরোগগ্রস্ত শিশুদের পক্ষে বিশেষ ফলপ্রদ। নাভীর চারিদিকে খামচানো বেদনা এটার বিশেষ প্রয়োগ লক্ষণ। কলচিকাম – শরৎকালীন আমাশয় বা উদরাময়ে বিশেষ উপযোগী। আমাশয়ে মলত্যাগের পরেও অনেকক্ষণ পর্য্যন্ত কোঁথানি থাকে, সেটার নিবৃত্তি হলে রোগী ঘুমিয়ে পড়ে। পানির মত পাতলা মলের সঙ্গে সাদা ছেঁড়া ছেঁড়া টুকরা আম, সকল প্রকার খাদ্যে, বিশেষতঃ রন্ধন করা খাদ্যে অরুচি।

রক্তস্রাব।-যে কোন দ্বার হতে রক্তস্রাব। নাক, মুখ, পাকস্থলী, মলদ্বার, ফুসফুস, মূত্রথলী, জরায়ু বা যে কোন স্থান হতে রক্তস্রাব হতে পারে। রক্ত উজ্জ্বল লাল অর্থাৎ তাজা রক্ত ও ঐ রক্ত চাপ বাঁধে না। মাঝে মাঝে স্রোতের মত রক্তস্রাব হয়, রক্তস্রাব হওয়ার সময় রোগীর শ্বাসকষ্ট ও মূৰ্চ্ছার ভাব হয়, রক্ত দেখে সে ভীত হয়ে পড়ে এবং সেইসঙ্গে গা-বমি-বমি থাকে। রক্তস্রাব কম হোক বা বেশী হোক যদি স্রাবের সাথে গা-বমি-বমি ও শ্বাসকষ্ট থাকে এবং পিপাসার অভাব দেখা যায়, তখন ইপিকাকই একমাত্র কার্যকরী ঔষধ। তুলনীয়। -যেখানে খুব বেগের সাথে রক্তস্রাব হয় এবং পিপাসা, অস্থিরতা, মৃত্যুভয়. ইত্যাদি লক্ষণ থাকে সেখানে অ্যাকোনাইট কার্যকরী অ্যাকোনাইট সর্বদা প্রাথমিক ঔষধ। রক্ত যদি খুব গরম হয়, রক্তসঞ্চয়ের জন্য রক্তস্রাবের স্থানটি লাল ও গরম হয়ে উঠে, দপদপ করে, রোগীর মুখটি লাল, নাড়ী মোটা, এবং অস্থিরতার পরিবর্তে ঘুম ঘুম ভাব থাকে, কিন্তু ঘুমের ভিতর যদি চমকিয়ে উঠে, তবে বেলেডোনা কার্যকরী। রক্তস্রাব বেশীই হোক বা অল্পই হোক, যদি কিছুতেই স্রাব বন্ধ না হয়, মাথায় অনবরত ঠান্ডা চায়, এমন কি ডিজা গামছা মাথায় জড়িয়ে রাখতে ভালবাসে সেই সঙ্গে প্রবল পিপাসা থাকে এবং পানি পানের কিছু পর সেটা বমি হয়ে উঠে যায়, তবে ফস্ফোরাস উপযোগী। যেখানে উজ্জ্বল ও তাজা রক্তস্রাব হয়, পেটে প্রসব বেদনার মত জোর বেদনা ও বেগ হয় এবং উপদংশের ইতিহাস পাওয়া যায়, সেখানে অ্যাসিড-নাইট্রিক উপযোগী। উজ্জ্বল লালবর্ণের রক্তস্রাব অথচ বেদনা বা কোন প্রকার উপসর্গ নেই এই অবস্থায় মিলিফোলিয়াম বিশেষ উপযোগী। ইরিজিরণ-রক্তস্রাবের আর একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ, মস্তকে রক্তাধিক্য, আরক্ত মুখমন্ডল, নাক হতে রক্তস্রাব সেইসঙ্গে অল্প অল্প জ্বর। পাকস্থলী হতে রক্তবমনে জ্বালা এবং প্রবল বমনের উদ্রেক থাকে। ট্রিলিয়াম-নাক হতে এবং স্ত্রীলোকদের জরায়ু হতে প্রচুর পরিমাণ রক্তস্রাব সেইসঙ্গে অস্বচ্ছ দৃষ্টি, কানে মেঘ গর্জনের মত শব্দ। হৃৎকম্পন প্রভৃতি উপসর্গে থাকে। চায়নাতেও এই সকল উপসর্গ প্রকাশ পায়। এটা ব্যতীতও দেশীয় ঔষধ-দুর্বা হতে প্রস্তুত দুর্বা বা সাইনোডনড্যাকটিলন, কুকসিমা হতে প্রস্তুত মিয়া- ওডোরেটা, বট হতে-ফিকাস-ইন্ডিকা, অশ্বত্থ হতে ফিকাস-রিলিজিওনা প্রভৃতি ঔষধ লক্ষণানুসারে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

ঋতুস্রাব।– ঋতুস্রাব নিয়মিত সময়ের বহুপূর্বে প্রকাশিত হয়, উজ্জ্বল ও তাজা স্রাবের জন্য রোগিণী হাঁপেতে থাকে এবং জরায়ু হতে নাভিপ্রদেশ পর্য্যন্ত সূঁচফোটানর মত একটা তীব্র বেদনা অনুভব করে। রক্তস্রাবের জন্য রোগিণীর দেহ ও মন অবসন্ন হয়ে পড়ে, শরীর হলুদবর্ণের হয়, চোখ দুইটির চারিদিকে কাল রেখা পড়ে, সেইসঙ্গে গা-বমি-বমি বা বমি থাকলে ইপিকাকই একমাত্র ঔষধ।

ম্যালেরিয়া-জ্বর। -ম্যালেরিয়া জ্বরের সাথে ব্রঙ্কাইটিস ও রক্তস্রাব থাকলে বা কুইনিনের অপব্যবহারের ইতিহাস থাকলে অথবা জ্বরের কোনরূপ ধারাবাহিক নিয়ম না থাকলে ইপিকাক বিশেষ ফলপ্রদ। জ্বরের আরম্ভ হতে প্রায় শেষ পর্য্যন্ত বমন ও গা-বমি-বমি বিদ্যমান থাকে। সাধারণতঃ এটা শীত ও উত্তাপ বেলা ৯টা হতে ১০টার সময় আরম্ভ হয় (বেলা ৯টা হতে ১১টার মধ্যে জ্বর আসিলে নেট্রাম-মিউর উপযোগী) এবং এটার শীতশূন্য জ্বর হঠাৎ বৈকাল ৪টার সময় আরম্ভ হয়। জ্বরে পিপাসা প্রায়ই থাকে না এবং জিহবাও পরিষ্কার থাকে। ইপিকাকের শীতাবস্থা অপ্রবল ও অল্পক্ষণ স্থায়ী, কিন্তু এটার উত্তাপাবস্থা প্রবল ও বহুক্ষণ স্থায়ী। এটার রোগীর ঘাম না হয়েই জ্বর ছেড়ে যায় এবং জ্বরের সময় চুপ করে পড়ে থাকে। ম্যালেরিয়া জ্বরে যদি বিশেষ নির্ণায়ক লক্ষণ না পাওয়া যায় তবে ইপিকাক ব্যবহাৰ্য্য। এতে জ্বরের ধারাটি পরিবর্ত্তন হয়ে অন্য ঔষধের সুস্পষ্ট লক্ষণ উপস্থিত করে।

বৃদ্ধি।-গ্রীষ্মকালে; গরম আর্দ্র বায়ুতে; গরম ঘরে, উত্তাপে; কুলপী- খেলে (কলিক); উদ্বেগ চাপা পড়ে; গুরুপাক বা ঘৃত ও মসলা দেওয়া খাদ্য গ্রহণে; কুইনাইন হতে; নড়াচড়ায়; শব্দে; ক্রোধে।

হ্রাস। -জলপান করলে (শীত); বিশ্রামে; চাপে; চোখ বন্ধ করলে; খাওয়ার সময় ( দন্তশূল)।

শক্তি।– ১x, ৩x, ৬, ৩০, ২০০ ক্রমই বেশী ব্যবহৃত হয়।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!