আয়োডিয়াম (।odium)
পরিচয়।– অন্য নাম আয়োডিন। এটা সমুদ্রের পানিতে এবং খনিজাত ঝর্ণাপানিতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। ঔষধটি অ্যান্টিসোরিক, অ্যান্টিসাইকোটিক ও অ্যান্টিসিফিলিটিক।
ব্যবহারস্থল। -আয়োডিনের প্রধান ক্রিয়া গ্রন্থিসমূহের উপর এবং তারপর শ্লৈষ্মিক ঝিল্পীর উপর। আয়োডিন, ব্রোমিন ও স্পঞ্জিয়া এই তিনটি ঔষধকে হ্যালোজেন পর্য্যায় বলা হয়; এদের প্রত্যেকেরই মুখ্য ক্রিয়া গ্রন্থিসমূহের উপর। আয়োডিনের রোগীর বর্ণ কাল, চুল কাল, চোখের তারা কাল; ব্রোমিনের চোখতারা নীল, কটা চুল ও ফর্সা বর্ণ; স্পঞ্জিয়ার চেহারায় সেরূপ কোন বিশেষত্ব নেই। আয়োডিন শরীরের প্রত্যেকটি যন্ত্রের উপর ক্রিয়া করে এবং এটার ক্রিয়া প্রকাশে কিছু বিলম্ব হয়।
গন্ডমালা, গলগন্ড, লসিকাগ্রন্থির প্রদাহ, সন্ধিপ্রদাহ, উদরাময়, সর্বাঙ্গের শীর্ণতা, ক্ষয়কাস সংশ্লিষ্ট বিলোপী জ্বর, অন্ডকোষের স্ফীতি, ফুসফুসের ক্ষয়, শিশুদের মধ্যান্ত্রগ্রন্থির ক্ষয়রোগ, অস্থির বিভিন্ন রোগ, ঘুংড়ি কাশি, পারদদোষ জনিত গ্রন্থির বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রভৃতি রোগে উপযোগী।
প্রদর্শক লক্ষণ।– খাওয়ার পর সকল কষ্টের উপশম। ভাল ক্ষুধা আছে, খায় খুব, কিন্তু শরীর রোগা হয়ে যায়, শুকিয়ে যায়। অসীম দুর্বলতা, সহজেই ঘাম হয়, গরম বোধ করে, ঠান্ডা স্থানে থাকতে চায়, ঠান্ডা বাতাস ও ঠান্ডা খাবার চায়। রোগী অত্যন্ত অস্থির, নিরস্তর পরিশ্রম করে বা হেঁটে বেড়ায়। সিঁড়ির উপর উঠতে দুর্বলতা বোধ ও হাঁপানি। কাশি, শুইলে, ঘরের মধ্যে, গরম অথচ আর্দ্র বায়ুতে বৃদ্ধি। যাদের গণোরিয়া বা মেহরোগ আছে তাদের বাত সন্ধি ফোলা ও যন্ত্রণা। হাত-পা ঠান্ডা। হৃৎরোগের জন্য শোথ। সমস্ত বুকে সুড়সুড় করে। কাশবার সময় শিশু গলায় হাত দেয়। উদরাময়, মল চর্বির মত পদার্থ, সাদা ফেনা। কোষ্ঠবদ্ধতা, ঠান্ডা দুধ খেলে উপকার হয়। ন্যাবা, শরীর হলদে। লিভার বড়। প্রস্রাব হলদে। গয়টার বা গলগন্ড, তা যেন টান হয়ে থাকে। মুখ হতে গন্ধ বের হয়। স্ত্রীরোগীর স্তন ও ডিম্বাশয় শুকিয়ে যায়, স্তন দুইটি ন্যাকড়ার থলির মত। পুরুষের মুখ শুষ্ক হয়ে সঙ্গমশক্তি কমে যায়। চোখের শুক্ল পটল নীলবর্ণ হয়। প্লীহা ও যকৃৎ স্ফীত, পেটের নীল শিরাগুলি স্পষ্ট দেখা যায়। মাসিক ঋতুকালে প্রচুর ক্ষয়কর প্রদরস্রাব। শরীরের গ্ল্যান্ড বড় হয় ও শক্ত হয়। আক্রান্ত পার্শ্বে শুইতে পারে না। রোগ ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় এবং রোগী খুব দুর্বল ও রোগা হয়ে পড়ে।
মন।-রোগী অত্যন্ত উৎকণ্ঠিত ও খেয়ালি। একটু সময়ও সে কোথাও স্থির হয়ে বসতে পারে না। চুপ করে বসলেই ব্যাকুলতা বাড়ে, তাই সর্বদা ঘুরে বেড়ায়। হঠাৎ তার স্মৃতি-বিভ্রম ঘটে, দোকানে সমস্ত জিনিষের ফর্দ দিয়ে হয়ত জিনিষ না নিয়েই বাড়ী ফিরে আসে (অ্যাগ্লাস, অ্যানাকা, কষ্টি, ল্যাক-ক্যান, নেট্রাম-কার্ব)। হঠাৎ আত্মহত্যা করার প্রবল ইচ্ছা জাগিয়া উঠে তারপর সে অসম্ভব খেয়ালি, আজ ইচ্ছা হইল হয়ত ঘর-সংসার ছেড়ে বের হবে, আবার দু- চারদিন পরেই সে মতের পরিবর্ত্তন হইল। তুলনীয়। – সিপিয়া – রোগী অনবরত উৎকণ্ঠিত, কিন্তু সে উদাসীন। ক্যানাবিস-ইন্ডিকা-রোগীর মনের মধ্যে নিত্য নূতন ভাবের উদয় হয়। কিন্তু সেটা তার বিকৃত বুদ্ধির পরিচয়। হাইড্রোফোবিনাম – রোগী অনবরত কাল্পনিক দৃশ্য দর্শন কিন্তু জলাতঙ্ক রোগেই এমন ভাবের উদয় হয়। কেলি-ব্রোম -রোগী স্থির হয়ে মুহূৰ্ত্তকাল বসে থাকতে পারে না, কিন্তু তার হাতের আঙ্গুলগুলিই সর্বাপেক্ষা বেশী অস্থির। ল্যাক-ক্যানাইনাম এতে অত্যধিক স্মৃতি-বিভ্রম আছে। লিখবার সময় বর্ণচ্যুতি হয়, কিন্তু এটার মধ্যে সময় ও স্থানের ব্যবধান সম্বন্ধে ধারণাই বিশেষ উল্লেখযোগ্য-অল্প সময় দীর্ঘকাল মনে হয়; সামান্য দূরত্বকে বেশী দূর মনে করে। লিলিয়াম-টিগ-রোগিণী সর্বদাই ব্যস্ত, কিন্তু সে জরায়ুরোগগ্রস্তা। মেডোরিনাম- রোগীর স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত ক্ষীণ কথা বলতে বলতে ভুলে যায়, কিন্তু এতে গণোরিয়া চাপা পড়ার ইতিহাস থাকে। নাক্স-ভূমিকা- রোগীর স্মৃতিশক্তি অতি ক্ষীণ। কিন্তু রোগের কারণ অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাদ্য ভোজন, রাত্রিজাগরণ, অতিরিক্ত উগ্র ঔষধ সেবন ইত্যাদি।
স্বভাব ও গঠন।-রাক্ষুসে ক্ষুধা, রোগী খায়-দায় বেশ, কিন্তু দিন দিন শীর্ণ হয়ে যায় (অ্যাব্রোট, নেট্র-মি, টিউবার, স্যানিকু); ক্ষুধা পাইবামাত্র কিছু না খেলে মহা অস্বস্তি বোধ করে; তার শরীরের নানাস্থানের গ্রন্থি ফুলে উঠে এবং স্ত্রীলোক হলে স্তন ও পুরুষ হলে অন্ডকোষ শুকিয়ে যায়। আয়োডিয়াম রোগী আহারে রত থাকলে রোগের ও মানসিক উদ্বেগের কথা ভুলে যায় (অ্যানাকার্ডিয়াম)। ডাঃ হিউজেস বলেন-বলিষ্ঠ যুবকদের গন্ডমালাজনিত ক্ষয়রোগে এই ঔষধ উৎকৃষ্ট। সে সকল যুবক-যুবতী অতি শীঘ্র শীঘ্র বেড়ে উঠে এবং শরীর অত্যধিক শীর্ণ হয়ে পড়ে তাদের পক্ষে আয়োডিন অমৃত তুল্য। এরূপ অবস্থায় ফস্ফোরাসও উপযোগী। আয়োডিয়ামের সাথে ফস্কোরাসের সম্বন্ধ অতি নিকট। ফস্কোরাসে সাধারণতঃ আয়োডিয়ামের মত গ্রন্থিস্ফীতি লক্ষণটি তত সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পায় না।
ম্যারাসমাস বা পুঁয়ে-পাওয়া রোগের জন্য আয়োডিন একটি চমৎকার ঔষধ। বলিষ্ঠ শিশু যখন ক্রমশঃ শীর্ণ হতে থাকে ও উদরাময় হয়, তখন আয়োডিয়াম একটি ফলপ্রদ ঔষধ। জীৰ্ণ-শীৰ্ণ শিশুর অত্যধিক ক্ষুধা, খাওয়ার জন্য অনবরত কাঁদে, যতই তাকে খেতে দেওয়া হয়, ততই সে আরও খাইবে বলে চীৎকার করে। খায়-দায় খুব অথচ ক্ৰমান্বয়ে জীর্ণ-শীর্ণ হতে থাকে। শীর্ণতার সাথে প্লীহা প্রায়ই শক্ত, বেদনাযুক্ত ও বড় থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে প্লীহার স্ফীতির সাথে যকৃতেরও দোষ ঘটে। পেটের উপর শিরাজাল স্পষ্ট ভাসিয়া উঠে। রোগী মুক্ত স্থানে থাকলে ভাল থাকে।
তুলনীয়।– অ্যাব্রোটেনাম – শরীরের চেয়ে পা দুইটির অধিক শীর্ণ হয়। অতিশয় ক্ষুধা থাকে, অথচ প্রচুর খেলেও দেহ পৃষ্ট হয় না। শিশুর চোখ দীপ্তিহীন, চোখের চারিদিকে কাল রেখা পড়ে এবং নাক হতে রক্ত পড়ে। নেট্রাম-মিউর-নিয়মিত আহারাদি করেও শিশু দিন দিন শুষ্ক ও জীর্ণ-শীর্ণ হলে এবং গলদেশ গ্রীষ্মকালে অধিক শীর্ণ হলে, নেট্রাম-মিউর কাজ করে। নেট্রামের শিশু ক্রন্দনশীল, সামান্য কারণে কাঁদে ও কাঁচা নূন খায়। সার্সাপ্যারিলা -প্রথমে শিশুর গলা শীর্ণ হয়, তার পর ক্রমশঃ বৃদ্ধদের মত সকল শরীরের চর্য ঝুলে গড়ে। স্যানিকুলা ও লাইকোপোডিয়ামে প্রথমে শরীরের উপরের দিক শীর্ণ হয়, পরে নিম্নাঙ্গ শীর্ণ হতে থাকে। আর্জ- নেইট্রি-শিশুর শরীর এত শীৰ্ণ হয় যে, তাকে প্রকৃত বয়স অপেক্ষা অধিক বয়স্ক (প্রায় বৃদ্ধের মত) বলে মনে হয়। টিউবারকিউলিনাম -শিশুর বেশ ক্ষুধা আছে, খায়-দায়, বেশ তথাপি শরীর অতি দ্রুত শীর্ণ হতে থাকে। রোগী ঠান্ডা মোটেই সহ্য করতে পারে না, অতি সহজেই ঠান্ডা লাগে, অতি যত্নে রাখা সত্ত্বেও কি করে শিশুর ঠান্ডা লেগে যায় ভেবে শিশুর মা বিস্মিত হন।
যক্ষ্মা-প্রথম অবস্থায় বুকের মধ্যে দুর্বলতা বোধ, বিশেষতঃ সিঁড়িতে উঠবার সময়। বুকের মধ্যে সুড়সুড় করে কাশি হয়। গরম ঘরে কাশি বাড়ে। গয়ার আঠা আঠা, স্বচ্ছ, কখন কখনও গয়ারে রক্তের ছিট দেখা যায়। প্রবল জ্বর, ঘাম। সকালে ঘাম। নানাপ্রকার গ্রন্থি-স্ফীতির সাথে ক্ষয়রোগে এই ঔষধ কাজ করে। হৃষ্টপুষ্ট ব্যক্তি কাশির সাথে রক্তস্রাব হতে যদি ক্রমশঃ জীৰ্ণ-শীৰ্ণ হয়ে পড়ে; শীর্ণ অবস্থায় কেবল খাই খাই ভাব থা”ে। উদরভঙ্গ থাকলে আয়োডিন বিশেষ সাবধানতার সাথে প্রয়োগ করতে হয়। তুলনীয়।– ষ্ট্যান’ – আয়োডিয়ামের মত বক্ষঃস্থলের দুর্বলতা এবং এটাই ষ্ট্যানামের বিশিষ্ট লক্ষণ। এই দুর্বলতায়। রাগীর কথা বলতেও কষ্ট হয়। প্রচুর পরিমাণ গয়ার উঠে, তার আস্বাদ মিষ্টি বা লবণাক্ত।
ষ্ট্যানাম-আয়োড-ষ্ট্যানামের লক্ষণ সত্ত্বেও যেখানে ভাল কাজ পাওয়া যায় না সেখানে এটা বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়, ফলতঃ এটা যক্ষ্মার একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ।
স্পঞ্জিয়া-গলগন্ড এবং শরীরের অন্যান্য স্থানে গ্রন্থিস্ফীতির সঙ্গে ক্ষয়রোগ, গলনলীর শুষ্কতা ও কঠিনতা, বক্ষঃস্থলে দুর্বলতাবোধ, যাহার জন্য রোগী কথা বলতে পারে না। খুসখুসে কাশি, কথা বলতে, ঠান্ডা বাতাসে এবং জোরে নিঃশ্বাস নিতে কাশির বৃদ্ধি।
নিউমোনিয়া-প্রবল জ্বর, সমভাবে চলে, কমতে চায় না। অত্যন্ত পিপাসা। কাশি, শ্বাসকষ্ট, গয়ারে রক্তের দাগ। খোলা হাওয়ায় উপশম। আক্রান্ত পাশে শুইতে পারে না। নিউমোনিয়ার সাথে স্বরভঙ্গ থাকে। এতে ডানদিকের ফুসফুসই বেশী আক্রান্ত হয়। প্রদাহের প্রথমাবস্থা শেষ হয়ে রস-রক্ত সঞ্চারিত হতে আরম্ভ করলে অর্থাৎ হিপাটিজেনাস অবস্থায় আয়োডিয়াম অধিক উপযোগী। এই অবস্থাতেও রোগীর খাই খাই ভাবটি থাকে।
উন্মাদ রোগ।-রাক্ষুসে ক্ষুধা, খুব খায়, অথচ রোগা হয়ে যায়। ঘুম নেই। লোক দেখিলে ভয় পায়। এক জায়গায় থাকতে পারে না। বিষণ্ণ। ঠান্ডা জায়গা খোঁজে।
কাশি।-গলা ও বুক সুড়সুড় করে ও কাশি হয়। শুষ্ক কাশি। কাশির সঙ্গে বুকে সূঁচফোটান ব্যথা ও জ্বালা। প্রচুর গয়ার উঠে, গয়ারে রক্ত, এটা নোনতা, টক, ধূসর রঙ বা সাদা। ফুসফুসে চুলকায়, সেই চুলকানি নাক পর্য্যন্ত যায়। কাশির আগে নাকের ডগা চুলকায়। পিঠের উপর শুইলে কাশি। তুলনীয়।-ষ্ট্যানাম -বুকে খালি খালি বোধ। কাশি কেবলমাত্র দিবাভাগেই হয়, ডিমের সাদা অংশের মত প্রচুর পরিমাণ গয়ার উঠে, সেটার স্বাদ মিষ্টি বা লবণাক্ত, রাত্রিকালে প্রচুর পরিমাণ ঘাম (প্রচুর ঘাম কেলি-আয়োডে আছে, কিন্তু সেটাতে বক্ষঃস্থলের দুর্বলতা নেই)। স্পঞ্জিয়া-কাশির সঙ্গে বায়ুনলী ও গলনলীর শুষ্কতা, কাশির সময়ে হিসহিস শব্দ বা করাত দ্বারা চিরিবার মত শব্দ, বক্ষঃস্থলের দুর্বলতা। ব্রাইওনিয়া — আক্ষেপিক শুষ্ক কাশি, কাশবার সময়ে বুকে ছুঁচ ফোটান বেদনা আয়োডিয়ামে চিৎ হয়ে শুইলে বৃদ্ধি; ব্রাইওনিয়ায় ব্যথাযুক্ত পার্শ্বে চেপে শুইলে উপশম।
ক্যান্সার রোগ।-আয়োডিয়াম ক্যান্সার রোগের একটি প্রধান ঔষধ। ক্যান্সার রোগে আয়োডিয়াম নির্বাচন কালে স্থানিক লক্ষণের চেয়ে মানসিক লক্ষণের উপরই অধিক নির্ভর করতে হয়। অ্যালেন বলেন–জরায়ুগ্রীবার ক্যান্সারের ক্ষতে কাটিয়া ফেলার মত যন্ত্রণা এবং প্রত্যেকবার মলত্যাগের সময় জরায়ু হতে রক্তস্রাব হলে বা রক্তস্রাব বহুকাল স্থায়ী হলে, সেই সাথে প্রদরের স্রাব থাকলে এবং ঐ স্রাব যেখানে লাগে সেই স্থানে ঘা হয়ে ছিদ্র হয়ে গেলে আয়োডিয়াম ফলপ্রদ ঔষধ। যে কোন রোগই হোক না কেন, যদি রাক্ষুসে ক্ষুধা সহ ক্রমবর্ধমান শীর্ণতা থাকে তবে আয়োডিয়াম ব্যবহার্য্য।
ক্রুপ বা ঘুংড়ি কাশি। -প্রথম অবস্থায় লক্ষণানুযায়ী অ্যাকোনাইট, স্পঞ্জিয়া, হিপার প্রভৃতি ঔষধ প্রয়োগে করে যদি উপকার পাওয়া যায়, তখন এই ঔষধ ব্যবহার করে বিবেচ্য। আয়োডিয়ামে শিশুর ঘুংড়ি-কাশি এত প্রবলভাবে হয় যে, তার গলার ঘড়ঘড় ও সাঁই সাঁই শব্দে সমস্ত গৃহ শব্দময় (বেল, ব্রোম, কেলি-ব্রোম, ল্যাকে, স্পঞ্জিয়া)। শিশুদের ঘঙঘঙে কাশি, কাশির সময় শিশু নিজের কণ্ঠনলীতে হাত দিলে এবং গরম ঘরে কাশির বৃদ্ধি হলে আয়োডিয়াম ব্যবস্থেয়।
উপদংশ। -উপদংশের তৃতীয় অবস্থায় এবং উপদংশজনিত গলক্ষত, গলগ্রন্থির স্ফীতি চোখতারকা-প্রদাহ (আইরাইটিস) রোগে এটা উপযোগী।
হৃদযন্ত্রের রোগ। -আয়োডিয়ামের রোগীর বুক ধড়ফড়ানি থাকে, কোনরূপ শারীরিক পরিশ্রম করলে হৃৎস্পন্দন দ্রুত হতে থাকে। হৃত্যন্ত্রের উদ্বেগের জন্য রোগী এক মুহূর্তও স্থির থাকতে পারে না। কখন বসতেছে, কখনও শুইতেছে, কখনও বা বেড়াচ্ছে। মনে হয় যেন হৃত্যন্ত্রটি দৃঢ়রূপে চেপে ধরেছে (ক্যাক্টাস, লিলি-টিগ, সালফার)। তুলনীয়। ক্যাক্টাস – মনে করে হৃৎপিন্ডটি যেন কেউ সাঁড়াসি দ্বারা চেপে ধরেছে। ক্যাক্টাসের হৃত্যন্ত্রের রোগ যান্ত্রিক দুর্বলতার জন্য হয়ে থাকে এবং আয়োডিয়ামে গ্রন্থির বৃদ্ধি বা হ্রাসের জন্য হয়ে থাকে। লিলিয়াম-টিগ-রোগিণী মনে করে যেন একটি বড় সাঁড়াসি দ্বারা হৃৎপিণ্ড দৃঢ়ভাবে ধরেছে, এটার হৃৎস্পন্দন প্রধানতঃ জরায়ুর দোষের জন্যই হয়ে থাকে। সালফার -এতে মহা উদ্বেগজনক হৃৎস্পন্দন। রোগী মনে করে যেন তার হৃত্যন্ত্রের আয়তন অনেক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে (ল্যাকে, মেডো)।
গ্রন্থি–স্ফীতি। আয়োডিয়ামের গ্রন্থি-স্ফীতি বেদনাশূন্য। গলগ্রন্থি (থাইরয়েড গ্ল্যান্ড), অন্ত্রাশয়- গ্রন্থি এবং অন্যান্য গ্রন্থিসমূহ স্ফীত ও শক্ত হয়, কিন্তু স্তন ক্রমশঃ থলথলে ও ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে। অন্ত্রাশয়ের অর্বুদ এবং শোথের জন্যও এটা ফলপ্রদ। গলগন্ড রোগে আয়োডিন ও ব্রোমিয়াম উভয় ঔষধেই ফলপ্রদ।
গলগন্ডের অন্যান্য তুলনীয় ঔষধ।– ব্রোমিন-গলগন্ড যখন পাথরের মত শক্ত হয় ভখন, বিশেষতঃ আয়োডিনের পরে ব্যবহৃত হয়। ব্যারাইটা-আয়োড-ব্যারাইটা ধাতুর রোগীদের গলগন্ডে বিশেষ উপযোগী। ফিউকাস-ভেসিকিউ-এটা যেমন মেদরোগের তেমনি গলগন্ডের একটি বিশিষ্ট ঔষধ। ল্যাপিস-অ্যাল্বা-এটাও গলগন্ড রোগে বিশেষ উপকারী। অসম্পূর্ণ বৃদ্ধি এবং বুদ্ধির জড়তা এটার প্রকৃতিগত লক্ষণ। স্পঞ্জিয়া -গলগন্ড, অত্যন্ত শক্ত এবং বড় হলেই সমধিক কার্যকরী হয়ে থাকে। স্পঞ্জিয়াকে গলগন্ডের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔষধ বললেও চলে। রাতে সমস্ত উপসর্গ বাড়ে এবং সময়ে সময়ে যেন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে মনে হয়। বাতরোগের পরে যদি গাঁটগুলি ফুলে বেদনাশূন্য অবস্থায় থাকে তবে আয়োডিন ব্যবহার্য্য।
উদরাময়।-পুঁয়ে পাওয়া রোগীদের পুরাতন উদরাময়ের জন্য এটা উপযোগী। এটার মল সাদা ও পাতলা, এইসঙ্গে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই গ্রন্থির স্ফীতি বর্ত্তমান থাকে ও মলে চর্বির মত পদার্থ থাকে।
ম্যালেরিয়া।– আয়োডিয়াম স্থলবিশেষে পুরাতন ম্যালেরিয়া রোগে ফলপ্রসূ হয়ে থাকে। কেন্ট বলেন-জ্বরের সময়ে রোগী ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে চায় এবং ঠান্ডা পানিতে হাত মুখ ও শরীর মুছিতে চায়। ম্যালেরিয়া জ্বরের সাথে রাক্ষুসে ক্ষুধা থাকে এবং উদরের উপর শিরাগুলি ভাসিয়া উঠে।
বৃদ্ধি। চুপ করে থাকলে; গরম ঘরে; ডানদিকে; পিঠের উপর গুইলে; না খেলে।
হ্রাস। খোলা হাওয়ায়; চলাফেরায়; ঠান্ডায়; ঠান্ডা বাতাসে; ঠান্ডা স্থানে, আবরণ খুলে দিলে; খেলে।
শক্তি।– ৩০, ২০০ বা তদূর্ধ্ব।