হায়োসায়েমাস-নাইগার (Hyocyamus Niger)

পরিচয়।-অপর নাম হেনবেন জ্যাঙ্কুইয়ামাই, শূকর-সীম বা বিষ-তামাক।

ব্যবহারস্থল।-ঔষধটির ক্রিয়াকেন্দ্র জ্ঞানাত্মিকা স্নায়ুমন্ডলী, মস্তিষ্ক ও পৃষ্ঠবংশীয় স্নায়ুমন্ডল। সুতরাং বুদ্ধিবৃত্তির বিকার জন্মাইয়া রোগীর চিত্ত-বিভ্রম ও উন্মাদভাব উপস্থিত করে। মানসিক লক্ষণই সর্বাধিক প্রণিধান যোগ্য। মানসিক-বিকৃতি, উন্মত্ততা, কামোন্মত্ততা, সূতিকা-উন্মাদ, মস্তিষ্ক ও মেরুমজ্জার ঝিল্লী-প্রদাহ, ধনুষ্টঙ্কার, তান্ডব, মৃগী নানাবিধ আক্ষেপ, জলাতঙ্ক, মূত্রাশয়ের আক্ষেপ, টাইফয়েড জ্বর, নিউমোনিয়া, বিকার অবস্থা, বাধক, প্রসবের পর স্রাব, মূত্ররোধ, কাশি, হিক্কা, ক্রোধের মন্দফল প্রভৃতি।

প্রদর্শক লক্ষণ।– রোগী কাপড় খুলে ফেলে। একেবারে উলঙ্গ অবস্থায় শুয়ে থাকে। অত্যন্ত কামুক বা কামুকা। গোপন অঙ্গ খুলে রাখে বা সেই সঙ্গে স্পর্শ করে। চৈতন্যহীন, জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেয় না। লোক চিনিতে পারে না। জবাব দিতে দিতেই ঘুমিয়ে পড়ে। যে সকল লোক সেখানে নেই তাদের সঙ্গে কথা কহে। ভাবে সে অন্য কোথাও আছে, বাড়ীতে নেই। প্ৰলাপ, সেইসঙ্গে মুখ ফ্যাকাসে, হাত-পা ঠান্ডা। বিড়বিড় করে অস্পষ্ট বকে। একবার কাঁদে, একবার হাসে। শূন্যে হাত দিয়ে কি যেন ধরতে যায়। অশ্লীল গান করে। হঠাৎ কাঁদিয়ে উঠে। বিছানা খোঁটে। হাত ও আঙ্গুলগুলি কাঁপতে থাকে। গালি দেয় ও মারিতে চেষ্টা করে। গিলবার সময় তড়কা। কেউ তাকে বিষ খাওয়াইয়া দিবে এই ভয়। ভয় পেয়ে তড়কা। আক্ষেপে সমস্ত মাংসপেশী মোচড়ায়। প্রাদাহিক লক্ষণ থাকে না। প্রেমে হতাশ, তার ফলে মৃগী রোগ। ফুলের গন্ধে মাথা ঘোরে। অসাড়ে বাহ্যে-প্রস্রাব হয়। সব জিনিস লাল বা বড় দেখায়। দ্বিগুণ দেখায়, বিকৃত দর্শন, যা নেই তাই দেখে। রাতকাণা। চোখ খোলা, বিকৃত আকার। নাক হতে রক্ত পড়ে। মুখ দিয়ে লালাস্রাব। মুখে ফেনা, ঠোঁট শুষ্ক। মুখ নীল, বড় করে খোলা। বিকারে জিহবা বের করে, কিন্তু ঢুকাইতে ভুলে যায়। দাঁতে সর্ভিস বা ময়লা। খুব কথা কহে বা কথা বলতে পারে না। জিহবার পক্ষাঘাত। রোগী বিনিদ্র, জলাতঙ্কের ভাব, পিপাসাশূন্য বা অত্যল্প পিপাসা। পেট ফোলা, বায়ুপূর্ণ। নাভি দিয়ে প্রস্রাব বের হয়ে যায়। প্রস্রাব বন্ধ বা অল্প। প্রসবের পর, গর্ভপাতের পর রক্তস্রাব ও খেঁচুনি। সমস্ত মাংসপেশী নাচে। শুইলে কাশি, উঠে বসলে কাশি কম হয়। হাত-পা ঠান্ডা। ডিফথিরিয়ার পর পক্ষাঘাত। প্রবল হিক্কা, সমস্ত মাংসপেশীগুলি আক্ষিপ্ত হয়। তড়কার সাথে গভীর নিদ্রা। চীৎকার করে জাগিয়া উঠে

মন।-রোগী অত্যন্ত হিংসুক ও সন্দিগ্ধ-চিত্ত, কাকেও বিশ্বাস করে না, এমন-কি স্বামী স্ত্রীকে ও স্ত্রী স্বামীকে বিশ্বাস করে না। তার সন্দেহ ‘কেউ হয়ত তাকে বিষ প্রয়োগ করবে’, এমন-কি দূরে বসে যদি তার পুত্র-কন্যা-স্ত্রী ইত্যাদি কথা কহে তাতে সে মনে করে, ‘সকলে একত্র হয়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বা তার নিন্দা করছে’; অ্যান্হ্যালোনিয়াম রোগীও সন্দিগ্ধ চিত্তের। সেই রোগী মনে করে যেন তার বন্ধুরা সকলেই তাকে ঠাট্টা ও উপহাস করছে, ব্যারাইটা-কার্ব রোগীও সব সময় মনে করে সকলে তাকে ঠাট্টা ও উপহাস করছে। এটার রোগী উন্মাদ অবস্থায় নানাপ্রকার বিভীষিকা দেখে, সময় সময় সে দেখে যেন শত্রু তার আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে; মধ্যে মধ্যে সে চীৎকার করে উঠে, কিন্তু পরক্ষণেই আবার বিড়বিড় করতে থাকে। ল্যাকেসিস রোগীও সকলকে অবিশ্বাস করে এবং তার প্রাণনাশের জন্য সকলে নানাভাবে চেষ্টা করছে এটা ভাবে। সেও অরিরত কথা বলে এবং মিনিটে মিনিটে বিষয় পরিবর্ত্তন করে। হারোসায়েমাসের রোগীর প্রচণ্ডতা অল্প, সে প্রায়শঃই বিড় বিড় করে বকে এবং মাঝে মাঝে ক্ষণিকের জন্য প্রচণ্ড হয়ে উঠে। দ্বিতীয়তঃ হায়োসায়েমাস রোগী অত্যন্ত কামুক, নিজের পরিধেয় বস্ত্র তুলে সকলকে গুহা-অঙ্গ দেখায়, অশ্লীল গান গায় এবং কখন কখনও একেবারে উলঙ্গ হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকে, পূর্ণ বিকারের ভিতরেও সে তার লিঙ্গটি বের করে নাড়াচাড়া করে ও সকলকে সেটা বের করে দেখায়। তৃতীয়তঃ হায়োসায়েমাস রোগিণীর হিংসাও অত্যধিক। সব সময় মনে করে বুঝি তার স্বামী অপর কোন স্ত্রীলোককে ভালবাসে। নিরাশ বা হতাশ প্রেমের জন্য নানাবিধ বিকার ভাব বা উন্মত্ততার ক্ষেত্রেও এটা উপযোগী। বিকারে হায়োসায়েমাস, বেলেডোনা ও ট্র্যামোনিয়ামকে trio বা ত্রয়ী বলা হয়। হায়োসায়েমাস, বেলেডোনা ও ট্র্যামোমোনিয়ামের মধ্যবর্ত্তী। এটার রোগী প্রলাপ বকে, কিন্তু কখনও বেলেডোনা ও ট্র্যামোনিয়ামের মত এটার প্রচণ্ডতা থাকে না। বেলেডোনার চোখ লাল সে প্রচন্ড, মারিতে যায়, কামড়াতে যায়। ট্র্যামো-অত্যন্ত উত্তেজিত, অবিরত প্রলাপ বকে, প্রার্থনা করে, অদৃশ্য ব্যক্তির সাথে কথা বলে। হায়োসায়েমাস অত্যন্ত স্নায়বিক। বিড়বিড় করে বকে, মাঝে মাঝে উগ্র হয়ে উঠে, হস্তদ্বয় কম্পনশীল। হাত দিয়ে কি যেন শূন্যে ধরতে যায়, মাঝে মাঝে শয্যার উপর উঠে বসে। তার চোখতারা বিস্তৃত, চোখ উন্মীলিত। ক্রমে রোগীর সম্পূর্ণ অজ্ঞান অবস্থা আসে। মৃদুভাবে বিড়বিড় করতে করতে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়, দাঁতে সর্ভিস পড়ে, চোখতারা বিস্তৃত হয়ে থাকে। হায়োসায়েমাসের উন্মাদ লক্ষণ ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়, প্রদাহের কোন নিদর্শন থাকে না। ইংরাজীতে একটা কথা আছে Busyinsanity-অর্থাৎ পাগল, বিড়বিড় করে বকে আবার কাজও করে যায়; সেটাই এটার রোগীর প্রাথমিক চিত্র।

নিউমোনিয়া।-মস্তিষ্ক লক্ষণ, প্রলাপ ইত্যাদি। অচেতন অবস্থা বা গভীর নিদ্রা। রাত্রে শুষ্ক কাশি। বুকে সর্দি ঘড়ঘড় করে। ক্যারোটিড দপদপ করে। হাত-পা ঠান্ডা। মুখ ফ্যাকাসে। বুকে টাটানি। বাঁ দিকের বুকে সূঁচফোটান ব্যথা। নোনতা গয়ার বা লাল রক্ত। প্রলাপের সময় বুকে ঘড়ঘড় শব্দ হয়। নিউমোনিয়ার সঙ্গে বিকার। বৃদ্ধদের নিউমোনিয়া। মাতালদের নিউমোনিয়া।

উন্মাদ রোগ। -উন্মাদ রোগী নানা প্রকারের খেয়াল দেখে, সব সময় সন্দেহ ভাব, ভাবে কেউ তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করার চেষ্টা করছে, সে কাকেও বিশ্বাস করতে পারে না। ক্ষুধার অভাব বা অত্যন্ত ক্ষুধা, কিন্তু খেলে সকল লক্ষণ বৃদ্ধি পায়। মাংসপেশী নাচে। অত্যন্ত কামুক, অশ্লীল কথা বলে। উলঙ্গ হয়ে থাকে। দৃষ্টিভ্রম। যেসকল লোক নিকটে নেই তাদের সঙ্গে কথা কহে। ঔষধ বা খাবার খেতে চায় না, বলে বিষ আনিয়াছে। খুব কথা বলে। অনবরত হাসে। সব জিনিষ বড় দেখে। কখনও অলস, কথা কহে না। ঘুম হয় না। প্রেমে হতাশ হয়ে উন্মাদ।

তুলনীয়।– বেলেডোনা – মস্তিষ্কের তরুণ প্রাদাহিক অবস্থায় বিশেষ ফলপ্রদ, সম্মুখে যাহাকে পায়, তাকে মারে, কামড়ায়, গায়ে থুথু দেয়। দ্রব্যাদি ভাঙে এবং বিছানা ছিড়িয়া ফেলে। ল্যাকেসিস – অত্যন্ত বাচালতা, রোগী অনবরত কথা বলে, এক বিষয় বলতে বলতে আবার অন্য বিষয়ে যায়। ঈর্ষান্বিত। ধর্মোন্মাদ। ট্র্যামোনিয়াম এটার উন্মত্ততায় (বেলেডোনায় কেবলি নিম্নে) – রোগী গান গায় কবিতা আবৃত্তি করে, দাঁত বের করে বিদ্রূপ করে, কাকুতি-মিনতি করে। অনর্গল কথা বলে (ল্যাকেসিসের মত)। ধর্মোন্মাদ, পানি বা চকচকে জিনিষের দিকে তাকালে তার আক্ষেপ বা ফিট উপস্থিত হয়। ভিরেট্রাম অ্যাল্বাম-কাটা-ছেঁড়া, কাপড় কাটা বা ছিঁড়ে ফেলা এটার প্রধান লক্ষণ। সমস্ত জিনিষ কাটিতে বা ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছা। চীৎকার করে, গালি দেয়।

গঠন ও স্বভাব।-রোগীর মুখমন্ডল ঠান্ডা, ফ্যাকাসে ও নীলবর্ণ, কখনও ফুলাফুলা। মুখে পেশীসকল নাচিতে থাকে, চোয়াল দুইটি আরষ্ট হয়ে যায়।

তড়কা বা আক্ষেপ।-আক্ষেপে দেহের প্রতিটি অংশ মোচড়ায়, চোখ বিস্ফারিত, দৃষ্টি স্থির। আক্ষেপের পরে ও আগে কম্পন। আক্ষেপ প্রায়ই কোনাকুনি আসে, অর্থাৎ এক হাত ও অপর পায়ে উপস্থিত হয়। ডাঃ গ্যারেন্সি বলেন এটার রোগীর শরীরের প্রত্যেক মাংসপেশীর, এমন-কি চোখ হতে পায়ের বুড়ো আঙ্গুল পর্যন্ত সকল স্থানেরই আক্ষেপ হতে পারে; শিশুর সামান্য কোন কারণে আক্ষেপ হতে পারে; শিশু যদি সামান্য কোন ভয় পায় বা কেউ তাকে ধমক দেয়, তা হলে আক্ষেপ হতে পারে। ক্রিমির জন্য ছোট শিশুদের আক্ষেপ হতে পারে। এটার আক্ষেপ দীর্ঘকাল স্থায়ী নয়; পেশীসকল অধিকক্ষণ সঙ্কুচিত থাকে না, নাক্স ভমিকা ও ট্রিকনিয়া রোগীর মত সঙ্কোচন অতি অল্প সময়ই বিদ্যমান থাকে। তড়কা হওয়ার আগে রোগীর অত্যন্ত ক্ষুধা পায়, মাতালের মত মুখের চেহারা হয়। এটার বৈশিষ্ট্য এই যে, এতে রোগীর রক্তসঞ্চয় বা প্ৰদাহ থাকে না। আক্ষেপের সময় শরীরের নানাস্থানের মাংসপেশীসকল নাচিতে থাকে। তড়কায় রোগীর মাংসপেশী ও হাত-পা নাড়া কোনাকুনিভাবে হলে সাইকিউটাও উপযোগী। হায়োসায়েমাসের তড়কা সাইকিউটার তড়কা হতে নিম্ন স্তরের। সাইকিউটার তড়কা ভীষণ প্রকৃতির এতে মাথা ও ঘাড় পিঠের দিকে ধনুকের মত বেঁকে যায়, মুখ দিয়ে গাঁজলা উঠে। শিশুদের ধনুষ্টঙ্কার, দাঁত উঠবার সময়ের তড়কা বা ক্রিমিজনিত তড়কায় বিশেষ ফলপ্রদ। শিশুদের ক্রিমিজনিত তড়কায় সিনা একটি বিশিষ্ট ঔষধ, এরূপ অবস্থায় কোয়াসিয়া এবং ইন্ডিগোও ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বেলেডোনায় প্রবল জ্বর ও মস্তিষ্ক লক্ষণ থাকে। চোখ আরক্ত এবং মুখমন্ডল লালবর্ণ হয়। কিউগ্রাম-মেট বা অ্যাসেট জ্ঞাপক তড়কায়, শিশু আঙ্গুল মুঠা করে মুখমন্ডল নীল হয়ে যায়। কোন প্রকার চর্মরোগ বসে গিয়া আক্ষেপ বা তড়কা উপস্থিত হলে কিউপ্রাম ব্যবহৃত হয়, মুখে ফেনা উঠে

হিষ্টিরিয়া। – রমণীদের মূৰ্চ্ছা রোগে এটা উত্তম ঔষধ, মূৰ্চ্ছাবায়ুর রমণীরা ঔষধ সেবন করতে চায় না, তারা মনে করে ‘বিষ দিয়ে মারিয়া ফেলিবে’-এটাই এই ঔষধের প্রধান লক্ষণ।

হিক্কা। হিক্কা হয়ে মাথা হতে পায়ের পেশীসকল স্পন্দিত হতে থাকে, হিক্কার চোটে যদি হাতে-পায়ে হেঁচকা টানের মত হয়, তা হলে এটা ব্যবহাৰ্য্য। পেটে অস্ত্রোপচারের পরও যদি হিক্কা হয় এবং বিকারের ভাব যদি প্রবল হিক্কার উপক্রম হয় তবে এটা ব্যবহারোপযোগী। তুলনীয়।– সিকুটা জ্ঞাপক হিক্কা উচ্চ শব্দবিশিষ্ট। অনবরত হিক্কা, এটার বিরাম নেই কয়েক দিবস ধরে চলে। কার্বো-ভেজ-নড়াচড়া করলে হিক্কার বৃদ্ধি হয়, পেট ফাঁপা থাকে, হিক্কার পরে রোগী আধবোজা চোখে পড়ে থাকে। নাক্স ভমিকা-অনিয়ম বা অত্যধিক আহার, বা গুরুভোজনের জন্য অথবা এলোপ্যাথিক ঔষধ সেবনের পরে হিক্কা, অম্ল বা চোঁয়া ঢেকুর। অ্যাগারিকাস – প্রবল হিক্কা, হিক্কার চোটে সমস্ত শরীর ঝাঁকি মারিয়া উঠে। বেলেডোনা – প্রবল হিক্কায় সমস্ত শরীর কাঁপিয়া উঠে, রোগী বিছানা হতে পড়ে, মাথা গরম, মুখমন্ডল লাল। ইগ্নেসিয়া – মানসিক উত্তেজনা এবং শোকদুঃখ হতে হিক্কার উৎপত্তি, আহার ও পানীয়ের এবং তামাকের ধূমপানে হিক্কার বৃদ্ধি। কেলি-ব্রোম – যেখানে হিক্কার বিরাম নেই, অনবরত চলতে থাকে। স্নায়ুপ্রধান, অস্থির ব্যক্তিদের পক্ষে উপযোগী। কিউগ্রাম-অ্যাসেটিকাম ও মেটালিকাম – আক্ষেপযুক্ত হিক্কার একটি বিশিষ্ট ঔষধ, উচ্চশব্দবিশিষ্ট। হিক্কা (সিকুটার মত)। বার বার উদগার উঠে। পালসেটিলা-তৈলাক্ত বা ঘৃতপক্ষ খাদ্যাদি আহারের পর হিক্কা, পানি অথবা ধূমপান (ইগ্লেসিয়ার মত) করার পরে হিক্কার বৃদ্ধি।

অনিদ্রা – রোগীর মস্তিষ্কের উত্তেজনাহেতু অথবা প্রবল জ্বরের জন্য স্বপ্নপূর্ণ নিদ্রা হয়। অত্যধিক উত্তেজনায় নানাপ্রকার কুস্বপ্ন দেখে। শিশু ঘুমাতে ঘুমাতে ফোঁপেয়ে কাঁদে, বিছানা খোঁটে, চমকিয়ে উঠে বা কখনও মুচকিয়া হাসে। তরুণ রোগেই সাধারণতঃ উপযোগী। তুলনীয়।– ব্রোমিয়াম – শিশু ঘুমাতে ঘুমাতে স্বপ্ন দেখে চমকে উঠে, জাগিয়া কাঁপতে থাকে। ক্যাডমিয়াম-শিশু ঘুমাতে ঘুমাতে দমবন্ধের মত হয়ে জাগিয়া উঠে, ভয়ে আর শুইতে পারে না। ক্যাল্কেরিয়া-কার্ব-চোখ বুজে রোগী ভয়ঙ্কর মূর্ত্তিসকল দেখে, স্বপ্ন দেখে, সামান্য শব্দ হলেই চমকে উঠে, আর নিদ্রা যেতে পারে না, সমস্ত রাত্রি জাগিয়া কাটায়। বোরাক্স-শিশু নিদ্রা যাবার সময়ে চীৎকার করে ক্রন্দন করে। স্বপ্ন দেখে মাকে জড়িয়ে ধরে, মনে হয় যেন, কত ভয় পেয়েছে। কেলি-ব্রোম-শিশু ঘুমের মধ্যে চীৎকার করে উঠে, থরথর করে কাঁপে, জ্ঞানহারা হয়

কাশি। -রোগী বিছানায় শুয়ে পড়লেই তার কাশির বৃদ্ধি। বালক ও বৃদ্ধদের ঐরূপ কাশিতে এটা দ্বারা উত্তম ফল পাওয়া যায়। এটা মূৰ্চ্ছাবায়ুগ্রস্তা স্ত্রীলোকদের স্নায়বীয় আক্ষেপিক শুষ্ক কাশিরও উত্তম ঔষধ। রোগী যখন বিছানায় মাথা দিয়ে শয়ন করে তখনই কাশির বৃদ্ধি হয় এবং বালিশ ছেড়ে উঠে বসলেই কাশির উপশম। পানি পান করলে কাশির উপশম-কষ্টিকাম ও কুপ্রাম। কাশির সময় উঠে বসলে বৃদ্ধি – কেলি-কার্ব। হায়োসায়েমাসের কাশি সাধারণতঃ আলজিহবার উপদাহ বশতঃ হয়ে থাকে। শুষ্ক কাশির জন্য বেলেডোনা রোগীও উঠে বসে, কিন্তু তাতে কোন আরাম হয় না। রিউমেক্স রোগীরও অত্যন্ত শুষ্ক কাশি, কিন্তু সে কোন প্রকার হাওয়া সহ্য করতে পারে না, সামান্য হাওয়া লাগলে তার কাশির বৃদ্ধি। শয়নে কাশির বৃদ্ধি-ড্রসেরা, রাস টক্স, আর্স প্রভৃতি। শয়নে কাশির উপশম একমাত্র ম্যাঙ্গেনাম রোগীরই দেখা যায়।

পক্ষাঘাত।-কোন সাংঘাতিক রোগের পর যদি রোগীর কোন বিশেষ অঙ্গের পক্ষাঘাত হয় বা কোনও মাংসপেশী আড়ষ্ট হয়ে পড়ে এবং সেই আক্রান্ত অংশ বা পেশীতে যদি হ্যাঁচকা টানের ভাব থাকে, তা হলে হায়োসায়েমাস ব্যবহার্য্য। এক্ষেত্রে কষ্টিকামও একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ।

হাম ও বসস্ত। -হাম ও বসন্তের গুটি বসে গিয়া বা উত্তমরূপে বের না হুইয়া রোগীর বিকারের ভাব উপস্থিত হয়; সে বিকারে বিছানা হাতড়ায়, কাপড় খোঁটে, তার মাংসপেশী হঠাৎ স্পন্দিত হয়ে উঠে, অনবরত মুখ নাড়িতে থাকে, দাঁত কড়মড় করে, অসাড়ে বাহ্য-প্রস্রাব করে, গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন আছে হঠাৎ চীৎকার করে উঠে ইত্যাদি লক্ষণে হায়োসায়েমাস উত্তম ঔষধ।

তুলনীয়।-হাম বসে গিয়া বিকার লক্ষণ প্রকাশ পায়, শিশু অচেতন, বিড়বিড় করে বকে, অথবা ঘুমাতে ঘুমাতে উচ্চ চীৎকার করে উঠে (যাহাকে Cephalic cry বলে), প্রস্রাব কমে যায় এবং পিপাসা থাকে না। ব্রাইওনিয়া-হাম বা বসন্তের উদ্ভেদ প্রকাশ পেতে বিলম্ব হয়ে বক্ষঃস্থল আক্রমণ করে, ব্রঙ্কাইটিসে ফুসফুসের লক্ষণ প্রকাশ পায়, এমন অবস্থাতেই ব্রাইওনিয়া বিশেষ উপকারী হুইয়া থাকে। ক্যাঙ্কার উদ্ভেদ হঠাৎ বসে গিয়া হিমাঙ্গাবস্থা উপস্থিত হলে ব্যবহৃত হয়। সমস্ত শরীর বরফের মত ঠান্ডা হয়ে যায়, অথচ রোগী গায়ে ঢাকা দিতে চায় না, মস্তিষ্ক-লক্ষণ প্রকাশ পেলেও এটা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিউগ্রাম-অ্যাসেটিকাম বা মেটালিকাম- উদ্ভেদ হঠাৎ বসে বিকার, তড়কা বা তড়কার উপক্রম হয়, মুখমন্ডল নীল হয়ে যায়। দী চল

সূতিকা-জ্বর বিকার। -সূতিকা-জ্বরের রোগিণীর হায়োসায়েমাসের মানসিক লক্ষণ প্রকাশ পেলে এই ঔষধ প্রয়োগ করা কর্তব্য। রোগিণী অত্যন্ত সন্দিহান, সে কাকেও বিশ্বাস করে না, কারও হাতে ঔষধ খেতে চায় না, মনে ভাবে বুঝি তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বিকারের ভিতর নানাবিধ, কাল্পনিক দৃশ্য দেখতে পায়। বিকারের ঝোঁকে সে উলঙ্গ হয়ে পড়ে থাকে এবং নানাবিধ অঙ্গভঙ্গি করে। তুলনীয়।-বেলেডোনা -প্রবল জ্বর, উগ্ৰ প্ৰলাপ, মুখমন্ডল আরক্ত, মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয় ইত্যাদি বেলেডোনার লক্ষণ থাকলে ব্যবহৃত হবে, নতুবা প্রকৃত রক্তদুষ্টির ঔষধ এটা নয়। এটা দূষিত হলে ব্যবহৃত হয়-ক্রোটেলাস, এচিনেসিয়া, এইল্যান্থাস, অ্যাসিড-কার্বলিক, কেলি-ফস, পাইরোজেন ইত্যাদি।

অ্যাসিড-কার্বলিক।-জরায়ু মধ্যে কিছু পচে সূতিকা-জ্বরের উৎপত্তি। অত্যন্ত পচা দুর্গন্ধযুক্ত লোকিয়া স্রাব, পচা দুর্গন্ধযুক্ত অতিসার। এটার ১x দিয়ে লোসন প্রস্তুত করে ডুস দিবেন এবং ৬ বা ৩০ শক্তি সেবন করাইবেন। এইল্যান্থাস-প্রবল জ্বর, অস্থিরতার সঙ্গে আচ্ছন্ন ভাব, বাহ্যে-প্রস্রাব অসাড়ে হয়, রোগিণীর চোখ ঘোলা, লোক চিনিতে পারে না, বিড়বিড় করে বকে। ক্রোটেলাস- সেটিক অবস্থা, জরায়ু বা নাক হতে কালো রঙের তরল রক্তস্রাব, সমস্ত শরীর বরফের মত ঠান্ডা। রোগিণী অত্যন্ত অবসন্ন। একিনেসিয়া-সূতিকা-জ্বরে রক্ত দূষিত হয়ে সেপটিক অবস্থা, অভিসার, মলমূত্র, নিঃশ্বাস, সমস্তই বিশ্রী দুর্গন্ধযুক্ত। এটার বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরিক উভয় প্ৰয়োগই হিতকর। পাইরোজেন-রক্তের দূষিত অবস্থা, সর্বশরীরে বেদনা, অস্থিতেও বেদনা, অস্থিরতা; নড়াচড়া ও উত্তাপে উপশম (রাসটক্সের মত); অতিসার পচা দুর্গন্ধযুক্ত মল, অথবা ওপিয়ামের মত কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্রাবেও পচা দুর্গন্ধ। ল্যাকেসিস-সেপটিক অবস্থা, অতিসারে পচা দুর্গন্ধযুক্ত মল, অত্যন্ত দুর্বল ও নিস্তেজ অবস্থা, হাত-পা ঠান্ডা। বিকারে রোগিণী আস্তে আস্তে বিড়বিড় করে বকে। কিছুক্ষণ প্রলাপ বকে আবার কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। শেষ অবস্থায় মৃতের মত অজ্ঞান ভাবে পড়ে থাকে, চোয়াল ঝুলে পড়ে।

টাইফয়েড জ্বর।-টাইফয়েড মস্তিষ্কের বিকৃত ভাব ও বিকারের প্রতি নজর রেখে ঔষধের ব্যবস্থা করা উচিত। হায়োসায়েমাস টাইফয়েডের প্রথম অবস্থায় সাধারণতঃ ব্যবহৃত হয় না; জ্বর একটু একটু করে বাড়িতে বাড়িতে বিকারের লক্ষণ, প্রলাপ ও ভুল বকা দেখা দিলে এটা ব্যবহাৰ্য্য। রোগীর প্রাদাহিক লক্ষণ থাকে না, স্নায়বিকতাই অধিক। চৈতন্য মোটেই থাকে না, ডাকাডাকি করলেও সে ঠিকভাবে উত্তর দিতে সমর্থ হয় না, নীচের চোয়াল ধরে যায়। কোন কোন রোগী একদিকে তাকাইয়া থাকে, তার চোখ-মুখ রক্তশূন্য হয় ও বসে যায়; রোগী চোখের সম্মুখে জাল জাল কি সব যেন দেখে, সেজন্য সে ঐগুলি ধরিবার জন্য হাত বাড়ায়। রোগী অনরবত হাত দিয়ে বিছানা খোটে, অনবরত বিড় বিড় করে বকে, আবার বহুক্ষণ পর্য্যন্ত নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে থাকে, কখন কখনও হঠাৎ বিছানা ছেড়ে উঠে বসে। হায়োসায়েমাস রোগীর অবসন্নতা যতই বেশী হয়, সে ততই নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং অসাড়ে বাহ্যে-প্রস্রাব করতে থাকে। সেইসঙ্গে তার হাতের বন্ধনীসকল সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হতে থাকে, দাঁতে সাদা লেপ পড়ে, তার নাড়ী দ্রুত, পুষ্ট ও অনমনীয় হয়। টাইফয়েড জ্বরের বিকারাস্থায় হায়োসায়েমাসের লক্ষণের সাথে ল্যাকেসিসের অনেকটা সাদৃশ্য আছে; রোগীর নীচের চোয়াল ঝুলে পড়া দুই ঔষধেই আছে এবং মাংসপেশীর স্পন্দনও উভয় ঔষধে আছে। ল্যাকেসিসের সর্বলক্ষণ নিদ্রার পর বৃদ্ধি হয় ও অতি দুৰ্গন্ধ মল, মলে খন্ড খন্ড খড়ের পোড়া অংশের মত বিশ্লিষ্ট রক্তখন্ড থাকে।

স্ত্রীরোগ।-এটার কামোন্মত্ততার কথা পূর্বেই বলেছি। গর্ভস্রাবের পর রক্তস্রাব রোগে যখন উজ্জ্বল লালবর্ণের রক্ত নিঃসৃত হয় ও সেইসঙ্গে তার মাংসপেশীসকল এক এক করে স্পন্দিত হতে থাকে, তখন এটা উপযোগী। ঋতুস্রাব হওয়ার আগে রোগিণীর মৃগীবৎ আক্ষেপ হতে থাকে; ঋতুকালে বা তৎপূর্বে সে কখন কখনও আবার একটানা “হো হো” করে উচ্চস্বরে হাসিতে থাকে। হাসির বিরাম নেই, হাসির চোটে দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। মাথায় ভীষণ যন্ত্রণা বাড়ে ও রাত্রে অত্যধিক পরিমাণে ঘাম হওয়ার ফলে খুব দুর্বল হয়ে পড়ে।

কলেরা।-কলেরার মূত্রবিকার অবস্থায় রোগী উলঙ্গ হয়ে পড়ে থাকে; সম্পূর্ণ অজ্ঞান অবস্থার মধ্যে লিঙ্গে হাত দেয়, চোখতারকা বিস্তৃত ও লালবর্ণ, একদৃষ্টে চেয়ে থাকে প্ৰভৃতি লক্ষণে হায়োসায়েমাস মন্ত্রের মত কাজ করে।

কলেরার মূত্রবিকার অবস্থায় তুলনীয়।-ক্যান্থারিস-ব্লাডারে প্রস্রাব জমা আছে, বেগ আছে, প্রস্রাব করার ইচ্ছা আছে, অথচ প্রস্রাব হয় না। অস্থিরতা আছে, বিকারে প্রলাপ, নিকটে যে থাকে তাকে মারিতে বা কামড়াতে চেষ্টা করে। আধ বোজা চোখ। হাত-পা-ঠান্ডা।

টেরিবিন্থ-ব্লাডারে প্রস্রাব জমা আছে অথচ বেগ নেই। পেট ফাঁপা, আচ্ছন্নভাব, শ্বাসকষ্ট।

মাস্কেরিন-রোগী পাগলের মত ভাব করে, ঝাঁকিয়া ঝাঁকিয়া উঠে, আবার ঘুমিয়ে পড়ে। হাত- পা ঠান্ডা, শ্বাসকষ্ট।

ওপিয়াম-ব্লাডার প্রস্রাবে পূর্ণ, অথচ প্রস্রাবের বেগ নেই, বাহ্যেও বন্ধ। সম্পূর্ণ চেতনাশূন্য। প্রলাপের সঙ্গে রোগী কটমট করে চায়।

অ্যামন-কার্ব।-অজ্ঞান, আচ্ছন্ন অবস্থা, গলা ঘড়ঘড় করে, ঠোঁট ও জিহবা নীলবর্ণ হয়। রোগী হাত বাড়াইয়া যেন কিছু ধরতে যায়।

হেলিবোরাস-সম্পূর্ণ অজ্ঞান অবস্থা অথবা অর্দ্ধ-অজ্ঞান (Semiconscious), অস্থিরতা। পিপাসা আছে বলে মনে হয় না, অথচ জলপাত্র মুখের কাছে ধরলে আগ্রহের সঙ্গে পান করে। সর্বদা একখানি পা নাড়ে। হাত-পায়ের বুড়ো আঙ্গুল মুঠা করে থাকে। নেট্রাম-ফস (বায়োকেমিক) মূত্রবিকারের শ্রেষ্ঠ ঔষধ এবং প্রথম হতে দিলে প্রস্রাব বন্ধ হয় না।

তুলনীয়।-আক্ষেপে-বেলেডোনা ও সাইকিউটা; উন্মাদরোগ -ট্র্যামোনিয়াম, ল্যাকেসিস; প্রসবান্তিক স্রাব রোধে-নাক্স-সিকেলি ও পালস; কাশির বৃদ্ধি লক্ষণে-ড্রসেরা, ফস্ফোরাস, রুমেক্স, বেলেডোনা।

বৃদ্ধি।-রাত্রে; ঋতুকালে শুইলে (কাশি)।

হ্রাস।– হেঁট হলে; বিছানায় উঠে বসলে; গরমে; চললে।

শক্তি।-৪, ৩, ৬, ৩০, ২০০, ১০০০ ও তদূর্ধ্ব ক্রম। ঔষধটির ক্রিয়ার উপর সব সময় সমভাবে নির্ভর করা চলে না। একটি বিশেষ শক্তিতে কাজ না পেলে অপর দুই একটি শক্তি পরীক্ষা করে দেখা কৰ্ত্তব্য।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published.

error: Content is protected !!