হেলিবোরাস-নাইগার (Helleborus Niger)
অপর নাম। মেলানপোডিয়াম বা ক্রিষ্টমাস-রোজ।
ব্যবহারস্থল।– ঔষধটির ক্রিয়াস্থান মস্তিষ্ক ও জ্ঞানকেন্দ্র। সুতরাং কলেরা, শোথ, মৃগী, সন্ন্যাস, আক্ষেপ, অন্ত্রচ্যুতি, বিষাদোন্মাদ, সূতিকাক্ষেপ, ধনুষ্টঙ্কার, টাইফয়েড, সূতিকাজ্বর প্রভৃতি রোগের সাংঘাতিক অবস্থায় উপযোগী।
প্রদর্শক লক্ষণ।-রোগীর গাত্রতাপ থাকে না, কদাচিৎ মাথা গরম থাকে। প্রস্রাব অতি অল্প পরিমাণে হয়। প্রস্রাবে কফির গুঁড়ার মত তলানি। সম্পূর্ণ সংজ্ঞাহীন, তবুও পানি মুখে দিলে চামচ কামড়িয়ে ধরে। মুখ নাড়ে, যেন কিছু চিবাচ্ছে। মুখ হতে অত্যন্ত দুর্গন্ধ বের হয়। জিহবা লাল ও শুষ্ক। ঠোঁট শুষ্ক ও ফাঁটা-ফাটা। নিম্ন চোয়াল ঝুলে পড়ে। কসে ঘা। মুখ হতে লালাস্রাব। অজ্ঞানতার মধ্যে এক হাত এক পা নাড়ে। দাঁতে আওয়াজ করে। নাসারন্ধ্রে কাল ঝুলের মত পদার্থ জমে থাকে। মাথা এপাশ-ওপাশ নাড়িতে থাকে। কাতরায়, হঠাৎ চীৎকার করে উঠে। মাথায় ঠান্ডা ঘাম। মুখে ঠান্ডা ঘাম। চর্মের উপর কালশিরার দাগ, নীল কাল দাগ। শরীরের চুল উঠে যায়। নখ খসিয়া পড়ে। বেলা ৪টা হতে সন্ধ্যা ৮টা পৰ্য্যন্ত বৃদ্ধি। অভিঘাত ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন বুঝতে পারে না, পেশীগুলি আয়ত্তাধানে থাকে না। রাতকানা। ঔষধটি ধীরে কাজ কের। কখন কখনও ঔষধ প্রয়োগের পর বাহ্যে-বমি লক্ষণ দেখা দেয়, তখন ধীরভাবে অপেক্ষা করতে হয়।
কলিক।-কলিক বেদনার সাথে দুর্বলতা। চোখ-মুখ বসা। মুখমন্ডল ঠান্ডা ও ফ্যাকাসে। মুখে চটচটে ঘাম। নাড়ী সূত্রবৎ। মল পাতলা জেলির মত। অসাড়ে দাস্ত হয়। পেটে ঠান্ডা বোধ। কাল রঙের বমি।
মাথাধরা। -মাথাধরা সামনে ঝুঁকলে বৃদ্ধি। চোখ বুজে স্থির হয়ে পড়ে থাকে। খোলা বাতাসে ভাল থাকে। আচ্ছন্নভাব। চোখ দুইটি কতকটা খোলা কতকটা বন্ধ বা অৰ্দ্ধমুদিত নেত্র ! উন্মাদরোগ।-একেবারে নিস্পন্দ, শূন্য চাহনি, কিছুই দেখে না। মুখ বুজে থাকে। রাত্রে ভূত দেখে। হাত ঠান্ডা, পা ঠান্ডা, সমস্ত শরীর ঠান্ডা। ফ্যাকাসে চেহারা। গরম বা ঠান্ডা, কিছুই সহ্য করতে পারে না। ভ্যাবাচাকার মত চেয়ে থাকে। আর্সেনিক -নির্বাক, কিন্তু দৃষ্টি বিষয়ক বৈলক্ষণ্য থাকে না। তুলনীয়।– কেলি-ব্রোমেটাম- স্বপ্নে ভূত-প্রেত দেখতে পায়; অনিদ্রায় রাত্রি কাটে মনে করে, তাকে কেউ বিষ খাওয়াইবে। স্থির হয়ে থাকতে পারে না, হাত দুটি অনবরত নাড়ে (জিঙ্কামে-পা নাড়ে), হায়োসায়েমাস-অত্যন্ত সন্ধিগ্ধচিত্ত, ‘কাকেও বিশ্বাস করে না, মনে করে তাকে বিষ খাওয়াইবে সেজন্য ঔষধও খেতে চায় না। কখনও উগ্র, কখনও নম্র, বিড় বিড় করে বকে, উলঙ্গ হওয়ার চেষ্টা করে। বেলেডোনা প্রবল উন্মত্ততা। মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয়, ভয়ঙ্কর উগ্রমূৰ্ত্তি, মারে, কামড়ায়। জোরে হাসে দাঁত কড়মড় করে, কল্পিত বস্তু দেখে ভয় পায়। জিনিষপত্র ভাঙ্গে, ছোঁড়ে। মুখমন্ডল লাল এবং থমথমে। উন্মত্ততার, প্রথম অবস্থায় উপযোগী। ট্র্যামোনিয়াম – কখনও হাসে, কখনও শিশ্ দেয়, চীৎকার করে, গালাগালি করে, কখনও হাতজোড় করে প্রার্থনা করে। সিমিসিগা- সূতিকাগারে স্ত্রীলোকদের উন্মাদ, লোকিয়া স্রাব বন্ধ হয়ে উন্মাদ, প্রলাপ বকে, চীৎকার করে, ভূত-প্রেতের ভয় আছে। প্যারিস-কোয়াড্রিফোলিয়া-কেউ উন্মাদ হয়ে যদি দিনরাত্রি অনর্গল বকিতে থাকে, তা হলে এই ঔষধ প্রয়োগে উপকার পাওয়া যাবে। ল্যাকেসিস-প্রেমে নিরাশ হয়ে অথবা শোক, দুঃখ, ভয়, বিরক্তি, হিংসা হতে রোগের উৎপত্তি, ধর্মবিষয়ে প্রলাপ বকে, রাতে শীত এবং দিনে গাত্রদাহ। রোগী অনর্গল বকে, এক বিষয় হতে বিষয়ান্তর যায়। ভিরেট্রাম-এল্বাম-উন্মত্ততায় কাপড় ছিড়িতে চায়, প্রত্যেক জিনিষটি কাটিতে ছিঁড়িতে চায়, প্রেম বা ধর্মবিষয়ে সব সময় বকে, প্রার্থনা করে। স্ত্রীলোক পাগল হলে, অধিকন্তু সে মনে করে তার গর্ভ হয়েছে, শীঘ্রই প্রসব হবে। কেলি-ফস (বায়োকেমিক) সর্বপ্রকার উন্মত্ততার প্রধান এবং বিশিষ্ট ঔষধ। অতিরিক্ত অধ্যয়ন অথবা মানসিক পরিশ্রম জন্য রোগ, উদ্বিগ্ন এবং সন্দিগ্ধচিত্ত, বিনা কারণে ভয় এবং সকল বিষয়ে দুর্ভাবনা। স্ত্রীলোকদের প্রসবের পরের উন্মত্ততা এবং মানসিক বিকৃতি।
মানসিক লক্ষণ।-রোগী বিমর্ষ, দুঃখিত ও নিরাশ। মানসিক লক্ষণগুলি টাইফয়েড জ্বরের প্রারম্ভে বা প্রথম যৌবন আরম্ভে ঋতু আরম্ভ হয়ে যখন আবার বন্ধ হয়ে যায় তখনই প্রস্ফুটিত হয়। অনুভূতি শক্তিই সর্বপ্রথম ব্যাহত হয়। চোখ, কর্ণ, নাক, জিহবা, ত্বক প্রভৃতি ইন্দ্রিয়ের শক্তি লুপ্ত হয়ে যায়। একদিকে ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকাইয়া আছে, কিন্তু কি দেখছে, কি শুনতেছে সে সম্বন্ধে তার কোন অনুভূতি নেই। হেলিবোরাস প্রয়োগে যখন উত্তেজনার ভাব আসে তখন জানিতে হবে রোগীর মেরুমজ্জার ক্রিয়া আরম্ভ হয়েছে। কোন কথা জিজ্ঞাসা করলে অতি ধীরে ধীরে উত্তর দেয়। তুলনীয়।-ব্যাপটিসিয়া-উত্তর দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়ে। অ্যাগারিকাস-উত্তর দিতে চায় না বা দেয় না। অ্যাসিড-সাঙ্ক ও স্যাবাডিলা-অতি শীঘ্র শীঘ্র প্রশ্নের উত্তর দেয়। সিনা, রাস-টক্স, অ্যান্টিম-ক্রুড-প্রশ্ন করলে অত্যন্ত চটিয়া যায়। অ্যাসিড-ফস-অসংলগ্নভাবে উত্তর দেয়, পুনরায় ঘুমিয়ে পড়ে। ক্যামোমিলা, অ্যাসিড-ফস-অত্যন্ত ককশভাবে কথার জবাব দেয়। আর্নিকা -কথা বলতে বলতে পুনরায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
মেনিঞ্জাইটিস।– মস্তিষ্ক মধ্যে রক্তস্রাব বশতঃ একাঙ্গের পক্ষাঘাত। মস্তিষ্কাবরণীয় প্ৰদাহ নিমিত্ত রোগী হতে হতে চীৎকার করে উঠে। ক্রমে ঘোর আচ্ছন্ন ভাব। কোন দিকে চেয়ে আছে, কিন্তু শূন্যদৃষ্টি যেন কিছুই উপলব্ধি করতে পারিতেছে না। আস্তে আস্তে ভুল বকা ও মাথা চালা আরম্ভ করে।
তুলনীয়।-এপিস-মেলিফিকা-সর্ববিষয়ে ঠান্ডা পছন্দ করে, খোলা বাতাসে লক্ষণের উপশম, কিন্তু হেলিবোরাসের রোগী অত্যন্ত শীতকাতুরে। সে গায়ে আবরণ চায় এবং গরম ঘরের ভিতর থাকতে পছন্দ করে। এপিস রোগীর পিপাসা মোটেই থাকে না। হেলিবোরাসে পিপাসা আছে, তার মুখের কাছে জলপূর্ণ চামচ বা ঝিনুক ধরলে চামচে জোরে কামড়িয়ে ধরে। বেলেডোনার রোগলক্ষণ হঠাৎ আবির্ভূত হয়ে ভীষণাকার ধারণ করে, রোগীর উত্তেজনার ভাবটাই অত্যধিক। অ্যাসিড-ফস্ফোরিকাম-নির্জীবের মত পড়ে থাকে। যতই আচ্ছন্নভাব থাকুক না কেন ডাকলে সাড়া দেয়, কিন্তু হেলিবোরাস রোগীর কোন চেতনা থাকে না। জিঙ্কাম -রোগের প্রায় শেষ অবস্থায় ব্যবহৃত হয়। এপিস, হেলিবোরাস প্রভৃতি ঔষধ প্রয়োগ করার পর মাথা চালা, চিবানোর ভাব চলে গিয়া স্নায়বিক উত্তেজনা বিশেষ থাকে না, কেবল পা দুইখানি নাড়ায়। জিঙ্কাম রোগীর কখনও সমস্ত শরীর পর্যন্ত কম্পিত হয়; হেলিবোরাসে তা হয় না, তার কম্পন হয় একদিকের হাত ও পায়ে। ওপিয়াম-রোগী ঘোর আচ্ছন্নভাবযুক্ত, জ্ঞান নেই, মুখমন্ডল লাল আভাযুক্ত, চোখ দুইটি অন্ধমুদ্রিত, শ্বাস-প্রশ্বাসের সময়ে ঘড়ঘড়ানি শুনা যায়, হেলিবোরাস রোগীর মুখমন্ডল পাংশু, চোখ দুইটি ফুলা, যেন একদিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাইয়া আছে, অথচ রোগী সেই অবস্থাতেই আচ্ছন্নভাবে পড়ে থাকে।
মস্তকে আঘাতাদির ফলে রোগ।-এই সকল ক্ষেত্রে আমরা আর্ণিকা ব্যবস্থা করে থাকি, কিন্তু যদি আর্ণিকায় কোনরূপ উপকার না পেয়ে রোগী ক্রমশঃ অজ্ঞানাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, সেইসঙ্গে তার একটি চোখ প্রসারিত অপরটি স্বাভাবিক থাকে, কোন কথা জিজ্ঞাসা করলে অতি বিলম্বে কথার উত্তর দেয়, পা নাড়িতে গেলে একটি পা ল্যান্টাইয়া পড়ে, তা হলে হেলিবোরাস দ্বারা উপকার পাওয়া যায়। ডাঃ ফ্যারিংটন এক প্রকার রোগী হেলিবোরাস দ্বারা আরোগ্য করতে সমর্থ হয়েছিলেন। মচকানো এবং থেৎলানো বেদনায় আর্ণিকা ফলপ্রদ ঔষধ কিন্তু যেখানে আর্ণিকা প্রয়োগেও বিশেষ বা স্থায়ী ফল পাওয়া যায় না, সেখানে বেলিস-পেরেনিস ব্যবহার করে দেখা উচিত, কারণ এরূপ স্থলে এটা আর্ণিকা অপেক্ষাও উৎকৃষ্ট বলে কথিত হয়ে থাকে। কিন্তু পতন বা মস্তকে আঘাতের পরিণাম ফলে যদি নানাবিধ উপদ্রব বা মানসিক গোলযোগ উপস্থিত হয়, নূতন বা অনেক দিন পর হলেও নেট্রাম-সাম্ফ তাহর উপযুক্ত ঔষধ হবে। (।ll-effects of falls andinjuries to the head, mental trouble therefrom-Dr. Bæricke.)
টাইফয়েড-জ্বর।-টাইক্রয়েডের বিকারাবস্থায়ই এটার প্রয়োগ বেশী। হেলিবোরাস রোগীর উত্তাপ কখনও বেশী থাকে না, কেবল অবসাদযুক্ত মস্তিষ্কবিকৃতির ভাবটিই লক্ষ্য করা যায়। রোগীর নাক ছিদ্র হতে আরম্ভ করে ঠোট পৰ্য্যস্ত যেন কেউ কালি ঢালিয়া দিয়েছে এরূপ দেখায়, তার জিহবা হলুদবর্ণের ও শুষ্ক, কিন্তু ধারগুলি লাল, মুখে অত্যধিক দুর্গন্ধ, পানি পান করার সময় সেটা শব্দ করে নামে, (সিনা, অ্যাসিড-হাইড্রো ও কুপ্রাম) বিকারে কি যেন চিবায়, ফ্যাস ফ্যাল করে একদিকে তাকাইয়া থাকে। পানিপিপাসা খুব না থাকলেও পানি দিলে আগ্রহের সাথে পান করে ও পানির চামচে কামড়িয়ে ধরে।
ম্যালেরিয়া জ্বর। -সাংঘাতিক ম্যালেরিয়া জ্বরে হঠাৎ রোগীর জ্বর কমে গিয়া যদি হিমাঙ্গ অবস্থা হয়, কপালে ঠান্ডা ঘাম, নাড়ী অত্যন্ত মৃদু, ভয়ানক তড়কা হতে থাকে এবং তড়কার সময় রোগীর সমস্ত শরীর বরফের মত শীস হয়, তখন ঔষধ ব্যবহার্য্য। রোগীর নাড়ী যতই ক্ষীণ হতে থাকে রোগীও ততই আচ্ছন্ন হয়ে, ড়ে, বিকারের ঝোঁকে কথা বলে; ঠোঁট, বিছানা ও কাপড় চোপর খোঁটে ও মাথা নাড়িতে থাকে। এখানে হাইড্রোসিয়ানিক-অ্যাসিড, ক্যাঙ্কার, কার্বো-ভেজ, সিকেলি, ল্যাকেসিস, ভিরেট্রাম-অ্যালাম প্রভৃতি ঔষধ তুলনীয়। ভিরেট্রাম অ্যাল্বাম – ভেদবমন সহ ম্যালেরিয়া জ্বর, কলেরার মত ভেদ-বমি হতে হতে রোগী হিমাঙ্গাবস্থায় উপস্থিত হয় এবং অনেকে মারাও যায়, এটাকে ম্যালিগন্যান্ট বা পার্ণিসাস ম্যালেরিয়া বলে। ভিরেট্রাম-অ্যাল্ব এমন জ্বরের অন্যতম উৎকৃষ্ট ঔষধ। কার্বো-ভেজ-জ্বরের সঙ্গে ভেদ-বমি হতে হতে যখন রোগী হিমাঙ্গাবস্থায় উপনীত হয়। নাড়ী সূতার মত অথবা একেবারেই পাওয়া যায় না। নিঃশ্বাস পর্য্যন্ত শীতল, স্বররুদ্ধ, অক্সিজেনের অভাব, রোগী কেবল পাখার হাওয়া চায়। অ্যাসিড-হাইড্রো – সমস্ত শরীর বরফের মত ঠান্ডা, নাড়ী লুপ্ত। বাহ্যে প্রস্রাব দুইই বন্ধ। কষ্টদায়ক শ্বাস-প্রশ্বাস, (অ্যাসিড- হাইড্রোর রোগী নিঃশ্বাস সহজে নিতে পারে, কিন্তু ত্যাগে কষ্ট। এই সঙ্গে অস্থিরতা থাকে, আর আর্সেনিকের রোগীর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, কিন্তু সহজে ত্যাগ করতে পারে, সেইসঙ্গে অস্থিরতা থাকে)। ক্যাঙ্কার -দুই একবার ভেদ-বমির পরেই রোগী হিমাঙ্গাবস্থায় উপনীত হয়, সমস্ত শরীর ঠান্ডা, নাড়ীও লুপ্ত। শ্বাসকষ্ট, কখন কখনও শীতও থাকে, অথচ রোগী গায়ে কাপড় রাখতে পারে না। (আর্সেনিকের রোগীর ভিতরে জ্বালা সত্ত্বেও গায়ে কাপড় রাখতে চায়)। সিকেলি-কর- হিমাঙ্গাবস্থা, সমস্ত শরীর বরফের মত ঠান্ডা, অথচ গায়ে জ্বালা, সেজন্য রোগী গায়ের কাপড় রাখতে পারে না। T।ngling sensation, অর্থাৎ সমস্ত শরীর ঝিনঝিন বোধ হয় এবং formication অর্থাৎ সমস্ত শরীরে যেন পিপীলিকা চলে বেড়াচ্ছে, এমন মনে হয়।
বেরি-বেরি ও শোথ। যে সকল বেরি-বেরি বা শোথ রোগে পেশীসমূহে দুর্বলতা অনুভব করা যায়, রোগীর মুখ রক্তশূন্য, ফ্যাকাসে অথবা থমথমে এবং সেইসঙ্গে মলত্যাগের সাথে চটচটে বা হড়হড়ে মল বর্ত্তমান, সেক্ষেত্রে হেলিবোরাস উপযোগী; মূত্র অল্প, মূত্রের বর্ণ ধোঁয়ার মত তলানিযুক্ত। শোথরোগী বসলে বা চলাফেরা করার সময় রীতিমত শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করতে পারে না, কিন্তু শুইলে অনায়াসে নিঃশ্বাস ফেলতে পারে। আর্সেনিকের শোথরোগী শুইলে পর শ্বাস গ্রহণ করতে পারে না। হাইড্রো-সেফেলাস রোগে এপিস সর্বশ্রেষ্ঠ ঔষধ, কিন্তু রোগীর যদি কোন অনুভূতি না থাকে, দেহের একদিক পক্ষাঘাতের মত হয়ে যায়, রোগী একহাত ও তদ্বিপরীতদিকের পা নাড়ে, তবে হেলিবোরাসই একমাত্র ঔষধ। এপিসের রোগীর জ্বর থাকে, হেলিবোরাসে জ্বর থাকে না। হৃত্যন্ত্রের রোগের সাথে শোথ রোগেও হেলিবোরাস বিশেষ উপযোগী ঔষধ। রোগীর প্রস্রাব ঘোলা, কালচে এবং পরিমাণে অল্প। গাত্রতাপ ৯৫.৬° বা ৯৬° ও সেইসঙ্গে মস্তিষ্কের নানাবিধ উপসর্গ বিদ্যমান থাকে !
বিষাদ বায়ু।–ডাঃ নোর বলেন যে, টাইফাস জ্বরের পর যে বিষাদ-বায়ু জন্মে তা তিনি এই ঔষধ দ্বারা আরোগ্য করতে সমর্থ হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, প্রাপ্ত যৌবনা বালিকাদের বিষাদ- বায়ু রোগের পক্ষে এই ঔষধ উপযোগী। প্রাচীনকাল হতেই এই ঔষধ (যারা রাত্রিকালে ভূত- প্রেতাদি দর্শন করে তাদের) বিষাদ-বায়ু রোগে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
তুলনীয়। ইগ্লেসিয়া-ভয়, দুঃখ অথবা নিরাশা জনিত রোগ, তরুণ রোগে বিশেষ উপযোগী। স্ত্রীলোকদের পক্ষে অধিকতর উপযোগী, বিশেষতঃ তাদের রজোনিবৃত্তি কালের রোগ। দুঃখে হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছেতথাপি রোগী কাঁদতে পারে না। প্লাটিনা-স্ত্রীলোকদের পক্ষেই বিশেষ উপযোগী, ফলতঃ এটা স্ত্রীলোকদের ঔষধ)। ঔদ্বত্য এবং আত্মগরিমা, রোগিণী অন্যান্য সকলকে নগণ্য মনে করে। কামোন্মাদ। অরাম-মিউর-সকল কাজে ব্যস্ততা, বিষণ্ণতা এবং নৈরাশ্য। রোগিণী বিলাপ করে, চীৎকার করে, তার আত্মহত্যা করার ইচ্ছা হয়, মাথাধরা, অনিদ্রা। নাক্স ভমিকা- পাকাশয়িক গোলযোগ এবং কোষ্ঠকাঠিন্যসহ বিষাদ-বায়ু খিটখিটে রুক্ষ মেজাজ, শব্দ, স্পর্শ, আলো, গন্ধ-এ সব কিছুই সহ্য করতে পারে না। নেট্রাম মিউর-ক্রোধ, দুঃখ, ভয় ইত্যাদির মন্দফল হেতু রোগ, সান্ত্বনা দিলে তার উপসর্গ বেড়ে যায় (সান্ত্বনায় পালসেটিলার রোগিণী শান্ত হয়, পালসেটিলার রোগিণী অভিমানিনী; নেট্রাম-মিউরের রোগিণী খিটখিটে মেজাজের)। স্নায়বিক – দুর্বলতা, যাহার জন্য হাত হতে দ্রব্যাদি পড়ে যায়।
উদরাময়। -শিশুদের দন্তোদ্গমকালীন হাইড্রোসেফেলাস এবং গর্ভবতী রমণীদের উদরাময় রোগে মল যখন মত পাতলা ও পরিষ্কার হয় অথবা গাঢ় আঠার মত এবং বর্ণহীন হয় অথবা ব্যাঙের ডিমের মত পদার্থ মিশ্রিত হয়, তখন এটা উপযোগী।
শিশু-কলেরা।-শিশু-কলেরা ও কলেরার বিকার অবস্থায় যখন রোগী অজ্ঞান-আচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে, ভুল বকে, মুখের নীচে যেন কালী মাখিয়া দিয়েছে এরূপ ভাব হয়, প্রস্রাব মোটেই হয় না, মাথা অনবরত চালতে থাকে, একদিকের হাত পা নাড়ায় পানি পানের সময় চকচক করে শব্দ হয়, পানির চামচে কামড়ে ধরে, শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়, তখন হেলিবোরাস উপযোগী। তুলনীয়। -জিঙ্কাম রোগের বর্দ্ধিত অবস্থায় শিশু যখন অত্যন্ত অস্থির হয়ে উঠে, বালিশে মাথা ঠিক রাখতে পারে না, জ্বর থাকে না, মস্তিষ্কে জলসঞ্চয়ের লক্ষণ প্রকাশ পায়, তখন জিঙ্কাম উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কেলি-ব্রোম-অনবরত বাহ্যে-বমি হতে হতে রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে, সর্বশরীর বরফের মত ঠান্ডাময়, অনিদ্রা, অস্থিরতা থাকে, তখন ব্যবহৃত হয়। ওপিয়াম-বাহ্যে-বমি বন্ধ হয়ে রোগী সম্পূর্ণ অজ্ঞান হয়ে যায়, চোখের পলক পড়ে না, এমন কি চোখের ভিতর আঙ্গুল দিলেও না, নিঃশ্বাসে ঘড়ঘড় শব্দ। ক্যাঙ্কে-কার্য-সাদা মল, চুণগোলার মত কখনও বা হলদে, মল নষ্ট দুধের মত, পচা মাখনের মত দুর্গন্ধ অথবা টক বমি করে।
বৃদ্ধি।-চর্মরোগ বসে গিয়া বা চাপা পড়ে; ঠান্ডা হাওয়ায়; সন্ধ্যা হতে সকাল পৰ্য্যন্ত; গাত্র- বস্ত্ৰ খুললে; বেলা ৪টা হতে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত; এপোপ্লেক্সির পর (জড়বুদ্ধি),
হ্রাস।— গরম বাতাসে; গায়ে কাপড়ের ঢাকা দিলে; চোখ বুজে চুপ করে শুয়ে থাকলে (মাথাধরা);
শক্তি।– নিম্নশক্তি ও ৩, ৬, ৩০ ক্রম ব্যবহার্য্য, কিন্তু ডাঃ ন্যাস ২০০ শক্তির পক্ষপাতী।