হ্যামামেলিস-ভার্জিনিকা (Hamamelies Virginica)
অপর নাম। উইচ-হ্যাজেল।
ব্যবহারস্থল।-এটাকে শিরার অ্যাকোনাইট বলে; অর্থাৎ শৈরিক কাল রক্তস্রাবের শ্রেষ্ঠ ঔষধ। রক্তস্রাব, অন্ডকোষ-প্রদাহ, ক্ষত, জরায়ুর রোগ, রক্তস্রাবী বসন্ত পাকাশয়ের ক্ষত, রক্তস্রাব, রক্তবমন, অর্শ, আঘাত পাওয়া, আঘাতের পর কালশিরা পড়া, ক্যান্সার হতে রক্তস্রাব, প্রদর প্রভৃতি।
প্রদর্শক লক্ষণ।-রক্তস্রাব, আক্রান্ত স্থানে থেঁৎলান বা টাটানি। রক্ত কাল। অত্যন্ত দুর্বলতা। অর্শরোগ, প্রচুর রক্ত পড়ে। মলদ্বারে অত্যন্ত টাটানি, সেই সাথে কোমরে ব্যথা, যেন কোমর ভেঙে যাবে। গলা সুড়সুড় করে কাশি হয়, ও রক্ত উঠে। কাশির সঙ্গে মুখে রক্তের স্বাদ বা গন্ধকের স্বাদ। বুকে টাটানি। টাইফয়েড জ্বরে কাল মত রক্তস্রাব। অনুকম্প স্রাব, নাক দিয়ে কিংবা মুখ দিয়ে (পাকস্থলী হতে) রক্ত উঠে। রক্ত কাল। আঘাত লাগবার পর আহত স্থানে প্ৰদাহ (আর্ণিকা)। নাক হতে রক্ত পড়ে, তাতে মাথার কষ্ট কম হয়। হেঁট হতে মাথা ঘোরে। দাঁত তুলিবার পর দাঁতের গোড়া হতে রক্তপাত। চোখপ্রদাহ, চোখ লাল। চোখে কিছু পড়ে বা অস্ত্রচিকিৎসার পর চোখ-ওঠা, সেই সাথে থেঁৎলান ব্যথা। অন্ডকোষে বেদনা, সেই বেদনা স্পারম্যাটিক- কর্ড দিয়ে অন্ডকোষে আসে। অন্ডকোষে প্রচুর ঘাম। অর্কাইটিস। বাতরোগ, মাংসপেশীতে অত্যন্ত টাটানি ব্যথা। রক্তস্রাবী বসন্ত, অত্যন্ত টাটান, রক্ত লাল।
নাকরোগ।-নাক হতে প্রচুর রক্তস্রাব এবং অনেক দিন পর্য্যন্ত স্থায়ী। রক্ত হয়ত ঘোর লালবর্ণের নচেৎ কালচে। এটার যাবতীয় রক্তস্রাবই শিরোদ্গত। রক্তস্রাবের আগে রোগীর মাথায় তীব্র যন্ত্রণা এবং রক্তপাতের পর যন্ত্রণার শান্তি হয়। মেলিলোটাস রোগীর রক্তপাতের আগে মুখমন্ডল লাল হয়ে উঠে এবং রক্তপাতের পর মাথাব্যথার শান্তি হয়।
রক্তস্রাব।-এটা নানাবিধ রক্তস্রাবের ঔষধ। প্রথম, সাবিত রক্ত শৈরিক বা কালচে, দ্বিতীয়, আক্রান্ত স্থানে টাটানি ব্যথা। এটার রক্তস্রাবের আগে মাথায় তীব্র যন্ত্রণা থাকে। রক্ত অল্প অল্প করে বের হয়, কিন্তু রোগী অত্যন্ত দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
তুলনীয়। বেলেডোনা-রক্ত লাল টকটকে এবং গরম, রক্ত নীচে পড়েই জমাট বাঁধিয়া যায়, কিন্তু হ্যামামেলিসের রক্ত জমাট বাঁধে না। মিলিফোলিয়াম -রক্তস্রাব উজ্জ্বল লাল, প্রচুর এবং বেদনাশূন্য হ্যামামেলিসে রক্তস্রাব পরিমাণে কম এবং টাটান ব্যথাযুক্ত। ইপিকাক-উজ্জ্বল লাল রক্তস্রাব, কিন্তু সবসময় বমনেচ্ছা থাকে। ইরেকথাইটিস-শরীরের যে-কোন যন্ত্র বা দ্বার হতে উজ্জ্বল লালবর্ণের রক্তস্রাব। ইরিজিরণ-উৎকৃষ্ট রক্তস্রাবরোধক ঔষধ। নাকের রক্তস্রাবে, মস্তকে রক্তাধিক্য, রক্তবমনে পাকস্থলীতে জ্বালা, রক্তমূত্রে মূত্রস্থলীতে টাটানি বেদনা থাকে।
মাসিক ঋতু।-দিনে প্রচুর পরিমাণে কাল রক্ত বের হয়। রাত্রে রক্ত দেখা যায় না। ঋতুবন্ধ হয়ে নাক-মুখ দিয়ে রক্ত উঠে। লাল উজ্জ্বল রক্ত, ডেলা থাকে না। কোমরে, পেটে ও পায়ে দারুণ যন্ত্রণা এবং পেট টাটিয়ে থাকে, হাত দিতে দেয় না। দুর্বলতা। তুলনীয়। – ফেরাম – ফস-লাল টকটকে রক্ত। অত্যন্ত মাথার যন্ত্রণা। মুখ লাল। বমি ও সেই সাথে গোটা গোটা খাদ্যদ্রব্য বের হয়। অ্যামন-কার্ব-ঋতুকালে কলেরার মত লক্ষণ। অ্যামন-মিউর -ঋতুকালে উদরাময় ও বমি। এপিস-ফ্যাকাসে মোমের মত চামড়া। জরায়ু স্থানে টাটানি। ঠান্ডায় উপশম। অল্প স্রাব। আর্জেন্ট – নেই-ডেলা ডেলা রক্ত। ঋতুকালে সকল কষ্ট কম হয়ে যায়। স্যাবাইনা-কোমর হতে পিউবিস পর্য্যন্ত ব্যথা। রক্ত লাল ও পাতলা, মাঝে মাঝে ডেলা থাকে। খোলা হাওয়ায় আরাম। সিকেলি- শরীর শীতল, কিন্তু গায়ে কাপড় বা গরম সহ্য হয় না। রোগা শীর্ণা স্ত্রীলোক। পাতলা পানির মত রক্ত। ট্রিলিয়াম-উজ্জ্বল রক্ত, সামান্য নড়লেই বৃদ্ধি। উরু ও পিঠে যন্ত্রণা। মূৰ্চ্ছার ভাব। রক্ত কূলকুল করে বের হয়। অষ্টিলেপ্পো লাল রক্ত। মাঝে মাঝে ডেলা থাকে। প্রসবের পর বা ঋতুলোপ কালে। জ্যান্থজাইলাম পেটে অত্যন্ত যন্ত্রণা, উরুতে ও নীচের পেটে যন্ত্রণা। রক্ত গাঢ় লাল। সবসময় দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। চায়না-পেট ফোলা, রক্ত কাল ও ডেলা ডেলা। রাত্রে বেশী। চুলে বেদনা। দুর্বলতা। সিনামোমাম-প্রসবের পর রক্তস্রাব। প্রসববেদনার মত বেদনা। জিঙ্কাম ঋতুর আগে যন্ত্রণা, ঋতুমতী হলেই সকল কষ্টের অবসান। ভাইবার্ণাম-বাধক বেদনা। দুৰ্গন্ধ রক্ত। জেলির মত। পুজা -ঋতু তাড়াতাড়ি হয়। ঋতুকালে শরীর ঠান্ডা ও দুর্বল। সকল কষ্ট বৃদ্ধি পায়। সিপিয়া – পরিমাণে কম। সকালেই প্রকাশ পায়, মাত্র ২/১ দিন থাকে। গর্ভের পঞ্চম ও সপ্তম মাসে রক্তস্রাব। পালস ঠান্ডা চায়। দিনে বেশী, রাতে কম। অনিয়মিত ভাবে হয় বা দেরীতে হয় অথবা অল্প পরিমাণে হয়। অ্যাসিড-নাই-প্রস্রাবে দুর্গন্ধ। নেট্রাম-বেলা ১০টার সময় বেশী। লবণ চায়। দিবারাত্র স্রাব বহিতে থাকে।
গর্ভস্রাব।-গর্ভস্রাবের পরও যদি রক্তস্রাব হয় এবং রক্তস্রাবের সময় যদি পেটে ভয়ানক টাটান ব্যথা থাকে, তা হলে হ্যামামেলিস আভ্যন্তরিক ও বাহ্যিক উভয়বিধ প্রয়োগই করা চলে। আর্ণিকা-আঘাত হেতু গর্ভস্রাবে, উজ্জ্বল লাল বর্ণের রক্ত। মস্তকে জড়তা বোধ। মস্তক উষ্ণ কিন্তু দেহ শীতল। বেলেডোনা -মস্তক গরম, মুখমন্ডল আরক্ত। জরায়ু হতে উজ্জ্বল লালবর্ণের উষ্ণ রক্তস্রাব। পেটের নাড়ীভুড়ি সমস্ত বের হয়ে আসিবে এই প্রকার অনুভূতি। কলোফাইলাম- যাদের প্রায়ই গর্ভস্রাব হয়, তাদের পক্ষে অধিকতর উপযোগী। জরায়ুর দুর্বলতা হেতু গর্ভস্রাবে। বেদনার সঙ্গে অল্প অল্প রক্তস্রাব। কেলি-কার্ব-গর্ভস্রাবের উপক্রম -কোমর যেন ভেঙে যাচ্ছে, এই প্রকারের অনুভূতিতে ব্যবহৃত হয়। স্যাবাইনা-৩য় বা ৪র্থ মাসে গর্ভস্রাবের আশঙ্কায় বিশেষ উপযোগিতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। স্রাব থেমে থেমে হয়। রক্ত কাল চাপ চাপ অথবা কতক চাপ, কতক তরল। কোমরে তীব্র বেদনা এটার বিশেষত্ব। স্যাবাইনার মত সিকেলি এবং ভাইবার্ণামও বিশেষ ফলপ্রদ ঔষধ। স্যাবাইনার কোমরে বেদনা, কাল চাপ চাপ রক্ত, সঞ্চালনে বৃদ্ধি। সিকেলতে প্রচুর কাল চাপ চাপ রক্তস্রাব, চোখ-মুখ বসে যায়, হাত-পা ও আঙ্গুলে আক্ষেপ প্ৰকাশ পায়। ভাইবার্ণাম -কোমর হতে বেদনা আরম্ভ হয়, পরে জরায়ু হতে উরুতে বিস্তৃত হয়। আঘাত বা ৰাত।-আঘাতপ্রাপ্ত বা বাতগ্রস্ত স্থানে অত্যন্ত থেতলে যাওয়ার মত ব্যথা। আর্ণিকার পর ক্যামোমিলা ব্যবহাৰ্য্য।
ডিম্বাধারের প্রদাহ।-আঘাতাদির ফলে রোগিণীর তলপেটে এত সাংঘাতিক ব্যথা হয় যে, রোগিণী তাতে হাত পৰ্য্যন্ত দিতে দেয় না-এরূপ ব্যথা প্রায়ই ঋতুর সময় বেশী হয়। আঘাত প্রাপ্তির পরের বেদনায় আর্ণিকা তুলনীয়।
শিরা-প্রসারণ রোগ বা ভেরিকোসিস। -গর্ভাবস্থায় পেটের শিরার প্রসারণ, জঙ্গার শিরার প্রসারণ; বাতগ্রস্ত রোগীর গলার শিরার প্রসারণ। এটার মাদার টিংচার ১ ভাগ ও ৬ ভাগ পানি একত্র মিশ্রিত করে আক্রান্ত স্থানে পটি বাঁধিলে ও আভ্যন্তরীণ ঔষধ সেবন করতে দিলে খুব শীঘ্র উপকার হয়।
অর্শরোগ।-অর্শরোগে কালচে বর্ণের রক্তস্রাব। বলিগুলি লাল বা নীল রঙের, গুহ্যদ্বারে জ্বালা ও টাটানি ব্যথা। এটা বাহ্যবলির পক্ষে উত্তম ঔষধ। হ্যামামেলিস -অর্শরোগের একটি বিশিষ্ট ঔষধ। বাজারের অনেক প্রসিদ্ধ পেটেন্ট ঔষধে হ্যামামেলিস আছে বলে কথিত হয়ে থাকে। কোমরে এত বেদনা, মনে হয় ভাঙিয়া যাচ্ছে। মলদ্বারে তীব্র টাটানি ও ক্ষতবোধ। ভূলনীয়। – মলদ্বার আগুনে পোড়ার মত জ্বালা, কিন্তু উত্তাপে বা গরম সেঁকে উপশম। অ্যামন-কার্য-রক্তস্রাবী অর্শ, মলত্যাগের সময়ে বলি বের হয়, মলত্যাগের পরে জ্বালা-যন্ত্রণা। মলদ্বার চুলকায়। স্ত্রীলোকগণের ঋতু সময়ে অর্শের বৃদ্ধি। কলিন্সোনিয়া -রক্তস্রাবী অর্শ। অর্শ হতে অতিরিক্ত রক্তস্রাব হয়, পেটে বায়ু জমে এবং বেদনা করে। কোষ্ঠবদ্ধতা এটার বিশেষ লক্ষণ। ইস্কুলাস – এতে রক্তস্রাব সামান্য থাকতে পারে অথবা আদৌ থাকে না (কলিন্সোনিয়ায় বিপরীত), কিন্তু কোমরে বেদনা এটার একটি বিশিষ্ট লক্ষণ, মলদ্বারে টাটানি বেদনা, মনে হয় যেন কাটা বিধিতেছে। চুলকানি ও জ্বালা। অ্যালো- আঙ্গুরের থলোর মত বলি। জ্বালাযন্ত্রণা ঠান্ডা পানিতে উপশম। মলদ্বারে ঠেলা মারা বেদনা, মলদ্বার গরম, চুলকায়, রক্ত পড়ে। নাক্স ভমিকা-রক্তস্রাবী অর্শ। যারা অতিরিক্ত পরিমাণে চা, কফি, মদ, গাজা, চরস খায়, পরিশ্রমের কাজ করে না, বসে বসে দিন কাটায়, তাদের পক্ষে উপযোগী। র্যাটানহিয়া-রক্তস্রাবী অর্শ, অত্যন্ত জ্বালা, মনে হয় যেন মলদ্বারে ভাঙ্গা কাঁচ ফুটান আছে, মলত্যাগের পর হতেই জ্বালা আরম্ভ। সালফার – মলদ্বারে হুলফুটানো বেদনা, জ্বালা-যন্ত্রণা, অনেক দিনের পুরাতন অর্শ। স্ক্রুফুলা এবং সোরাদোষগ্রস্ত রোগীদের পক্ষে বিশেষ উপযোগী। অর্শের রক্ত বন্ধ হয়ে মাথাধরা উপস্থিত হলে ব্যবহৃত হয়।
রক্তোৎকাস। রোগী তার মুখে গন্ধক বা রক্তের স্বাদ অনুভব করে। গলার শিরা দিয়ে আপনা হতে রক্ত বের হয়ে গলার ভিতর জমে এবং কাশবার সময় অতি সহজেই সেটা উঠে যায়, রোগীর প্রতি মাসে এমন রক্তমিশ্রিত গয়ার উঠে। রক্তোৎকাশি হওয়ার আগে রোগীর মাথায় তীব্র যন্ত্রণা হতে থাকে এবং বুকে টাটানি ব্যথা থাকে।
অন্ডকোষ-প্রদাহ।– গণোরিয়া হতে বা অন্য যে কোন কারণে অন্ডদ্বয়ে টাটানি ব্যথা, প্রদাহিত স্থানটি উত্তপ্ত, শুক্রবহা শিরায় ব্যথা ও স্ফীতি। তুলনীয়। পালসেটিলা- তলপেট হতে অন্ডকোষ পর্য্যন্ত বেদনা হয়, ঘন হলদে গণোরিয়া স্রাব, ঠান্ডায় উপশম। ফ্লুওরিক-অ্যাসিড অতি পুরাতন রোগ। ব্রোমিয়াম অন্ডকোষের প্রদাহ। বেদনার জন্য রোগী নড়াচড়া করতে পারে না। অন্ডকোষ ফোলা, গরম ও শক্ত হয়। ক্লিমেটিস-ঠান্ডা লেগে অথবা প্রমেহ স্রাব বন্ধ হয়ে অন্ডকোষের প্রদাহ। ডানদিকের কোষই অধিক আক্রান্ত হয়। স্পার্মাটিক কর্ড ফুলে মোটা হয় এবং সেটাতে বেদনা। ফাইটোল্যাক্কা-প্রমেহ অথবা সেকেন্ডারী উপদংশ জন্য একশিরা, অন্ডকোষ বেদনা, ফোলা ও কাঠিন্যতা। বেদনা লিঙ্গ এবং পেরিনিয়াম পর্য্যন্ত বিস্তৃত হয়। কোনায়াম -ফুলা এবং পাথরের মত শক্ত। আঘাত হেতু রোগে অধিকতর উপযোগী। রডোডেনড্রণ-ফুলো, শক্ত, বেদনা। প্রমেহ স্রাব রুদ্ধ হয়ে ফুলো। স্পঞ্জিয়া অন্ডকোষ ফুলো এবং শক্ত। বেদনা, স্পার্মাটিক কর্ড। ফুলে মোটা হয়, নড়াচড়ায় অত্যন্ত বৃদ্ধি। (বামকোষ অধিক আক্রান্ত হয়)।
বৃদ্ধি। দিনে; নড়াচড়ায়; পরিশ্রমে; খোলা হাওয়ায়; বর্ষাকালে; অপারেশনের পর (চোখ); ঋতুকালে।
হ্রাস। রাত্রে। নাক হতে রক্তস্রাবে (মাথাধরা); চাপ দিলে (চোখ)।
শক্তি। মূল-অরিস্ট ৩, ৬, ১২, ৩০ ক্রম।