গ্লোনইনাম (Glonoinum)
অপর নাম।-নাইট্রো-গ্লিসারিণ।
ব্যবহারস্থল।-ডাঃ হিউজেস বলেন -অনেকক্ষণ সূর্য্যোত্তাপে কাজ করার ফলে, গ্যাসের আলো অথবা ইলেকট্রিক আলোতে অনেকক্ষণ কাজ করার ফলে শিরঃরোগে ও সর্দি-গর্মিতে এটা কাজ করে। গর্ভাবস্থায় ধনুষ্টঙ্কারের মত আক্ষেপ। দন্তোদ্গমকালে শিশুদের ধনুষ্টঙ্কার, মেনিঞ্জাইটিস ও হৃৎরোগ। বেলেডোনা ও গ্লোনইন এই উভয় ঔষধের রোগীরই মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চয় ও পূর্ণতা বশতঃ দপদপানি উপস্থিত হয়। গ্লোনইন রোগীর লক্ষণাদি বেলেডোনা হতে তীব্রতর। গ্লোনইনের ক্রিয়া এবং তীব্র এত দ্রুত যে কারও মুখে ১x শক্তির দুই-এক ফোঁটা ঔষধ ফেলে প্যাথিতে আস্থাহীন এক রমণীর জিহবায় এই ঔষধটি ১x শক্তির এক ফোঁটা দিবার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তীব্র শিরঃরোগ অনুভব করে মূর্ছিত হয়ে পড়ে যান।
প্রদর্শক লক্ষণ।-সূৰ্য্যতাপ হতে রোগ। মাথা অত্যন্ত বড় মনে হয়। মাথায় উত্তাপ সহ্য হয় না, মাথা খোলা রাখলে উপশম (বেল -মাথায় আবরণ চায়)। আক্রান্ত স্থান দপদপ করে। সমস্ত শরীর দপদপ করে। সূর্য্য উঠবার সঙ্গে মাথা ধরে, সূর্য্য যত আকাশের নীচে নামে মাথাব্যথাও তত কম হয়। মস্তকে রক্তাধিক্য হেতু বমি-বমি ভাব। মাথা ভারী কিন্তু তা বালিশে রেখে যায় না। প্রত্যেক জিনিষের অর্দ্ধেক আলোকিত ও অর্দ্ধেক অন্ধকারময় দেখে। গলার উপর কাপড় রাখা যায় না, ঢিলা করতে হয়। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে পারে না। সামান্য নড়াচড়ায় বৃদ্ধি। সর্দি-গর্মির কুফল। ভয় পাওয়ায় কুফল। স্ত্রীলোকদের ঋতুলোপকালীন উপসর্গ। প্রসববেদনার সঙ্গে তড়কা। আক্ষেপে হস্ত মুষ্টিবদ্ধ হয়। (কিউপ্রাম-মেট) রোগিণী মনে করে যে তার মাথাটি ক্রমশঃ বড় হচ্ছে। কোথায় আছে বুঝতে পারে না। পরিচিত জায়গাও অপরিচিত মনে হয়। পুরাতন ক্ষতচিহ্ন পুনরায় থাকে।
তুলনীয়।-গ্রাফাইটিস-পুরাতন ক্ষতচিহ্নের উপর আবার ক্ষত হয়। সামান্য আঘাতে পুঁজ জন্মে। কষ্টিকাম- পুরাতন ক্ষতচিহ্নের উপর আবার ক্ষত প্রকাশ পায়। পোড়া ঘা সহজে শুকাতে চায় না। মুখ হতে হতে লাল হয়। তামাকের ধূমপান করার ইচ্ছা। মদ সেবনে সকল লক্ষণের বৃদ্ধি হয়, সেটা সহ্য হয় না। গা-বমি-বমির সঙ্গে ঘাম হয়। সর্দি-গর্মির সঙ্গে গা-বমি-বমি।
মন।-গ্লোনইন রোগীর স্মৃতিশক্তি বড়ই ক্ষীণ, সুপরিচিত রাস্তার নাম, এমন কি কোথায় তার বাড়ী তা পৰ্য্যন্ত ভুলে যায়। স্মৃতিশক্তিলোপের মত বুদ্ধিভ্রমও হতে দেখা যায়। রোগী পলায়ন করার চেষ্টা করে, জানালা দিয়ে লাফাইয়া পড়তে চায়; মনে করে যেন একটি স্ক্রু দ্বারা আটা আছে। গ্লোনইন রোগীর ক্রমে মস্তিষ্কের পক্ষাঘাত অবস্থাও উপস্থিত হয়, তখন রোগী মনে ভাবে তার মস্তকটি প্রকান্ড বড় হয়ে গেছে, অথবা মাথার খুলিটি একবার উঠে পুনরায় নেমে আসছে, মাথাটি বুঝিবা ফেটে যাবে। সামান্য ধাক্কায় বা বাধায় রোগী অজ্ঞান-অচৈতন্য হয়ে পড়ে। এই লক্ষণগুলির উপর যদি গ্লোনইন ব্যবহৃত হয় তবে পক্ষাঘাত, উন্মাদ বা মৃগী উপস্থিত হতে পারে না।
বাত।– বাঁ হাঁটুর বাতযন্ত্রণা, নড়াচড়ায় বৃদ্ধি। পা সোজা করে ছড়ালে উপশম। বাঁ হাতের আঙ্গুলে বাতের ব্যথা। পিঠে উত্তাপ বোধ। বুকে ঘাম। মাথাধরার সঙ্গে ঘাড় আড়ষ্ট। মুখ গরম, ফ্যাকাসে। মাথা বড় বোধ হয়। মাথাধরার সঙ্গে প্রচুর প্রস্রাব হয়। কান দুটি লাল। মুখে ফেনা। ধূমপানে ইচ্ছা। (বাতের বেদনা সঞ্চালনে বৃদ্ধি-ব্রাইওনিয়া; ঐ সঞ্চালনে উপশম -রাস টক্স)।
মাথাধরা।-মাথা ভারী, বিশেষতঃ কপাল। মাথাধরা ও সেইসঙ্গে কপালে গরম ঘাম। মনে করে মাথা খুব বড় হচ্ছে। কপালের পাশের কন্ডরা দুইটি দপদপ করে। চলবার ও নড়িবার সময় বৃদ্ধি। বের হতে চাপ দিলে মাথার যন্ত্রণা কম হয়। খোলা হাওয়ায় বেড়ালে উপশম, নাড়ী দ্রুত, মুখে ঘাম ও অর্দ্ধ অচেতন অবস্থা। আধকপালে মাথাব্যথা, প্রত্যেক জিনিষের অর্দ্ধেক আলোকিত ও অর্দ্ধেক অন্ধকারময় দেখে। শুইলে মাথাব্যথা বাড়ে (বেল)।
সর্দি-গর্মি।-সর্দি-গর্মির ফলে রোগী অনেক সময় অজ্ঞান-অচৈতন্য হয়ে পড়ে। সূৰ্য্যতাপ বা অন্য কোনপ্রকার উত্তাপের ফলে যে কেবল মস্তিষ্কই আক্রান্ত হবে তা নয়, রোগরি হৃৎযন্ত্র ও আক্রান্ত হতে পারে। সর্দি-গর্মির সাথে শ্বাস-প্রশ্বাসে ভয়ানক কষ্ট হয় ও বমি-বমি করে। জিহবা শ্বেতবর্ণ, ক্ষুধা মোটেই হয় না, কোন দ্রব্যে রুচি থাকে না, পেটে যন্ত্রণা হয়, কখন কখনও উদরাময় হয়। তুলনীয়।-বেলেডোনা-হঠাৎ প্রচন্ড ভাবে যন্ত্রণা আবির্ভূত হয়, সেইসঙ্গে মাথায় দপদপানি, চোখ-মুখ লাল। পার্থক্য-গ্লোনইন রোগীর মাথাটি পশ্চাদ্দিকে হেলাইলে উপশম বোধ করে। গ্লোনইন রোগীর মাথা অনাবৃত রাখলে বা মুক্ত বাতাসে উপশম বোধ করে কিন্তু বেলেডোনার যন্ত্রণা মাথায় ঢাকা দিলে উপশম বোধ হয়। অ্যাকোনাইট – ঘুমন্ত অবস্থায় মাথায় রৌদ্র লাগবার ফলে সর্দি-গর্মি, পিপাসা, অস্থিরতা ও মৃত্যুভয়। অ্যামিল-নাইট্রেট-মস্তকে রক্ত সঞ্চয়, মুখমন্ডল লাল হয়ে উঠে। শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা। খোলা বাতাস পাবার জন্য রোগী ছটফট করতে থাকে। (অনেক সময় মূল-অরিষ্ট বা নিম্নশক্তি ঘ্রাণে সুফল পাওয়া যায়)। নেট্রাম-কার্ব-সর্দি-গর্মি এবং তার মন্দফলে বিশেষ ফলপ্রদ। অত্যন্ত রৌদ্র লাগিয়ে বা গ্যাসের আলোকে রোগের উৎপত্তি বা বৃদ্ধি। গ্লোনইন রোগীর ঠান্ডা হাওয়ায় উপশম, কিন্তু নেট্রাম-কার্ব রোগীর ঠান্ডা হাওয়ায় বৃদ্ধি। সর্দি- গর্মি জন্য মাথাধরা এবং মাথাঘোরা। ল্যাকেসিস – অত্যন্ত রৌদ্র লাগিয়ে সর্দি-গর্মি। গ্লোনইন সাধারণতঃ তরুণ অবস্থায় ব্যবহৃত হয়। ল্যাকেসিস সাধারণতঃ গ্লোনইনের পরের অবস্থায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অল্প সময় মাত্র রৌদ্রে থাকলেও, ল্যাকেসিসের রোগীর শিরঃরোগ আরম্ভ হয়। ওপিয়াম-সর্দি-গর্মিতে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। চোখ আধবোজা (শিবনেত্র) রোগী কটমট করে চায়। মুখমন্ডল লাল; নিঃশ্বাসে ঘড়ঘড় শব্দ, বাহ্যে প্রস্রাব বন্ধ।
মেনিঞ্জাইটিস।-রোগলক্ষণ প্রকাশের আগে রোগী বমি করে। মেনিঞ্জাইটিস অবস্থা অতি দ্রুত উপস্থিত হয়; চোখ ও মুখমন্ডল ঘোর লাল এবং মাথায় তীব্র যন্ত্রণা হয়। সাধারণতঃ রৌদ্রে আগুনের তাপে অথবা গ্যাসের আলোকে কাজ-কর্ম করে মেনিঞ্জাইটিস এপিসের মত লক্ষণ, নিয়া উপস্থিত হয়, যথা-রোগীর বিকারে চীৎকার দেওয়া আছে, তবে এপিসে বেশী। উভয় ঔষধের রোগীই মাথা চালে, তবে এপিস রোগীর বেশী। গ্লোনইন রোগীর মুখমন্ডল ও চোখ লাল, কিন্তু এপিসের ফ্যাকাসে। এপিস রোগীর পিপাসার অভাব, গায়ে জ্বালা ও ঘামের অভাব দেখা যায়। গ্লোনইন রোগীর ঐরূপ বিশেষ কোন লক্ষণ নেই, মুক্ত হাওয়া উভয় রোগীই চায়। হেলিবোরাস অনবরত মস্তক এপাশ-ওপাশ করে, বালিশে মস্তক গুঁজিয়া দেয়, হাত দিয়ে আঘাত করে, চোয়াল নাড়াচাড়া করে মনে হয় যেন কিছু চিবাচ্ছে। হঠাৎ উচ্চৈঃস্বরে চীৎকার করে উঠে। সদাই তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব, পিপাসা কখনও থাকে, কখনও থাকে না, কিন্তু না থাকলেও পানির গেলাস মুখের কাছে ধরলে আগ্রহের সঙ্গে পানি পান করে। একখানি পা সদাই নড়ে।
প্রসবকালে বা প্রসবের পর তড়কা।-তড়কার সময় গ্লোনইন রোগিণীর মুখ লাল, আরক্তিম ও ফুলা ফুলা থাকে, প্রস্রাবে অ্যালবুমেন বিদ্যমান থাকে, নাড়ী পুষ্ট, কঠিন এবং রোগিণীর মুখ হতে গ্যাজলা গ্যাজলা ফেনা বের হতে থাকে। তার মনে হয় যে মাথাটি বড় হচ্ছে।
চোখের অসুখ। -উজ্জ্বল আলোকে কাজ করার জন্যই হয়ে থাকে। চোখদ্বয় অতি বৃহৎ বলে বোধ হয়। চোখের মধ্যস্থ রক্তবহা নাড়ীগুলি প্রসারিত হয় (পুরাতন ক্ষেত্রে রুটা)। গ্লোনইন রোগিণী মূর্ছিত হয়ে পড়বার আগে তার চোখের সম্মুখে কাল বিন্দুসকল উড়ে বেড়াতে দেখে (বারাই, নেট – মিউর), এইজন্য চতুর্দিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন গ্লোনইন রোগী চোখের সম্মুখে অক্ষরগুলি ক্ষুদ্র দেখে।
আঘাতজনিত রোগ।-কোন স্থানে আঘাত লেগে তা সাময়িকভাবে উপশম হওয়ার পর যদি পুনরায় বহুকাল পরে ঐ স্থানে ব্যথা হয় অথবা যদি পুনরায় পেকে উঠে বলে মনে হয়। তা হলে এই ঔষধ কাজ করে।
হৃদযন্ত্রের রোগ। হৃত্যন্ত্রের রোগ বাঁ দিকে শুইলে বাড়ে ও ডানদিকে শুইলে কমে। সমস্ত শরীর দপদপ করে। সম্মুখে ঝুঁকিতে পারে না। রোগীর হৃৎপিন্ড হতে রক্ত অতি দ্রুতবেগে মাথায় উঠে, সেইসঙ্গে তার নাড়ী ধীরগতি ও ক্ষণবিলোপী হয়, রোগী শুয়ে থাকলে তার হৃৎপিন্ডের মধ্যে যন্ত্রণা হতে থাকে। হৃৎপিন্ডের শূল ও সেইসঙ্গে হৃৎপিন্ডের দ্রুত স্পন্দন, মনে হয় যেন তার বক্ষঃস্থল ভেদ করে হৃৎপিন্ডটি বের হয়ে পড়বে। হৃৎপিন্ডের ব্যথা বামদিকের বাহুতে ছড়িয়ে পড়ে এবং রোগী শরীরের সর্বস্থানে নাড়ীর দপদপানি অনুভব করতে পারে। গ্লোনইন রোগীর দেহ উত্তপ্ত হওয়ার পর মনে হয় যেন তাহর মাথাটি স্ক্রু দ্বারা আঁটা আছে। শীত ও উত্তাপ বা বমন পৰ্য্যায়ক্রমে প্রকাশ পায়, মুখমন্ডল অত্যধিক গরম। মাথা গরম, শরীর ও পা ঠান্ডা মাথা বড় মনে হয় ও দপদপ করে। তুলনীয়।– অ্যামিল-নাই, বেল, এপিস, হায়ো, জেলস, আর্জ-নাই, কেলি-কার্ব, নেট্র-কার্ব, স্যাঙ্গু, ডিজি, ডায়স্কো ও সিকেলি।
বৃদ্ধি।– মাথা সামনে বাঁকাইলে; নড়াচড়ায় (মাথা ব্যথা); উত্তাপে; (মাথায় ঢাকা দিলে মাথার যন্ত্রণা বাড়ে); বর্ষাকালে; চুল কাটিবার পর; রৌদ্রতাপে; অগ্নিতাপে; গ্রীষ্মকালে, মদ খেলে; ধাক্কা লাগলে; সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলে; বাঁদিকে; সকাল ৬টা হতে বেলা দুপুর পর্য্যন্ত।
হ্রাস। -ঠান্ডা হাওয়ায় চললে; স্থিরভাবে শুইলে; ঠান্ডা বাতাসে, চাপ দিলে (মাথা ব্যথা); মাথার কাপড় বা টুপি ফেলে দিলে (মাথা ব্যথা); ঘাম হলে (গা-বমি-বমি)।
শক্তি।– ৩x, ৬x, ৬, ৩০, ২০০।